উটপাখির কোষ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এমন এক মাস্ক আবিষ্কার করেছেন, যা দিয়ে সহজেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যাবে।
গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা শনাক্ত করতে সক্ষম এই মাস্কটি আবিষ্কার করেছেন জাপানের কিটো প্রিফেকচারাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। আর এই গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন ইয়াশুহিরো সুকামটো।
করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে গেলে কিংবা মাস্ক পরা ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটি থাকলে তার ব্যবহৃত মাস্কটিকে অতিবেগুনি রশ্মিতে মেলে ধরলেই করোনার উপস্থিতি দেখা যায়।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এর সাহায্যে বাড়িতে বসেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি জানা যাবে। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে করোনাভাইরাস পরীক্ষার খরচও অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করছেন তারা।
একটি পরীক্ষায় ওই মাস্কগুলো কয়েকজনকে পরতে দেয়া হয়। ৮ ঘণ্টা পর এগুলো সংগ্রহ করে বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক ছিটিয়ে দেয়া হয়। পরে এগুলোকে অতিবেগুনি রশ্মির সামনে তুলে ধরলে দেখা যায়, যারা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন মাস্কে তাদের নাক ও মুখের অংশটিতে বিশেষ এক ধরনের রঙের উপস্থিতি রয়েছে।
গবেষকরা মাস্কটিকে এখন এমনভাবে তৈরির চেষ্টা করছেন, যেন অতিবেগুনি রশ্মি ও রাসায়নিক ছাড়াই করোনার উপস্থিতি দেখা যায়।
এ ধরনের মাস্ক তৈরিতে জাপানি বিজ্ঞানীরা বলেন, উটের কোষ ব্যবহার করার কারণ হলো অতীতের একটি গবেষণা। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার বিরুদ্ধে উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবডি রয়েছে উটপাখির শরীরে।
গবেষক দলের প্রধান সুকামটোও দীর্ঘদিন ধরে উটপাখির ওপর গবেষণা করছিলেন বিভিন্ন ধরনের ফ্লুয়ের বিরুদ্ধে এর প্রতিরোধ ক্ষমতার রহস্য খুঁজে বের করার জন্য।
সুকামটো জানিয়েছেন, নিজের শরীরের করোনাভাইরাসের উপস্থিতিও তিনি নিজের আবিষ্কৃত মাস্ক ব্যবহার করেই জেনেছিলেন। পরে সাধারণ পরীক্ষায়ও তার প্রমাণ মেলে।
তবে এর আগেও এমন মাস্ক আবিষ্কার করা হয়েছিল, যা করোনা শনাক্ত করতে সক্ষম।
মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যেই ভাইরাস শনাক্তে সক্ষম ছিল ওই মাস্ক। ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউ অব টেকনোলোজি (এমআইটি) ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই মাস্ক উদ্ভাবন করেন।
ন্যাচার বায়োটেকনোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন এই মাস্কে শক্তিশালী সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে, যা করোনাসহ অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে সক্ষম। ছোট এই সেন্সরটি অন্য যে কোনো মাস্কেও ব্যবহার করা যাবে।
এমআইটির অধ্যাপক জেমস কলিন্স বলেন, ‘আমরা মাস্কটিতে জৈব সিনথেটিক সেন্সর ব্যবহার করেছি, যা ব্যাকটেরিয়াল নিউক্লিক এসিড, বিষাক্ত কেমিক্যাল ও স্নায়ুর জন্য ক্ষতিকর পদার্থগুলো শনাক্তে কার্যকর।’
তিনি বলেন, ‘বায়োসেন্সর নিয়ে আমরা এমন পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছি যা সম্মুখসারির কর্মী, সামরিক কাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষায় ব্যবহৃত হতে পারে। এই মাস্কগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ব্যবহারকারী প্রয়োজনে নিজেই সেন্সর চালু ও বন্ধ করতে পারেন। মাস্কটিতে সিলিকন ইলাস্টোমার ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য পরীক্ষার ফলাফল যাতে মাস্কের ভিতরেই দেখা যায় এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
তবে এই গবেষণা যে সুফল বয়ে আনতে পারেনি, তা বর্তমান করোনা পরিস্থিতিই আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে। এবার দেখা যাক, জাপানের গবেষকদের এই নতুন আবিষ্কার কতটা সহজ করতে পারে করোনার বিরুদ্ধে মানুষের টিকে থাকার এই লড়াইকে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ