চেকপয়েন্টে না থামায় আফগানিস্তানে এক চিকিৎসককে গুলি করে হত্যা করেছে তালিবান সদস্যরা। গত শুক্রবার হেরাত প্রদেশে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই।
নিহতের স্বজনের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খামা প্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ওই চিকিৎসকের নাম আমরুদ্দিন নুরি (৩৩)। হেরাত শহরের একটি চেকপোস্টে না থামায় তাকে গুলি করা হয়।
সূত্র জানায়, নুরি একটি প্রাইভেট মেডিকেলে কর্মরত ছিলেন। তিনি নববিবাহিত ছিলেন। গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালিবান। এরপর দেশটি ছেড়েছেন হাজার হাজার বিদেশি নাগরিক এবং তাদের সহযোগীরা।
গত ২৪ নভেম্বর আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মত ক্ষমতা দখলের পর ১০০তম দিন পার করল তালিবান সরকার। এ কয়দিনে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে দেশটি।
তালিবানরা কাবুল দখলের পর হাজার হাজার মানুষ নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আশ্রয় নেয়। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কীভাবে মানুষ বিমানের মধ্যে উঠে পড়ে। এমনকি বিমানের ছাদে, চাকায়, পাখার ওপরেও মানুষকে দেখা গেছে। বিমানটি চলতে শুরু করার পরে কয়েকজনকে পড়ে যেতে দেখা যায়। অনেক মানুষের প্রানহানি ঘটে।
এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, কীভাবে দেয়াল টপকিয়ে, এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের ছুড়ে দেয়ালের এক পাশ থেকে অন্য পাশে পার করা হচ্ছে। একটি ছবিতে দেখা যায়, মা বাবা হারিয়ে একটি বাচ্চার আহজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বিমানবন্দরের পরিবেশ। এমন আশঙ্কার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ দিন পার করেছে। এখনও করছে।
বিবিসিকে দেশটির একজন ইট ভাটার শ্রমিক জানিয়েছেন, তার আয় কমেছে প্রায় ১২ গুণ। আগে তিনি ২৫ হাজার আফগানি মুদ্রা আয় করতেন। বর্তমানে সেটি দুই হাজারে নেমে এসেছে। দরিদ্র পরিবারের কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে জানান তিনি। এ শ্রমিক বলেন, তালিবানরা ক্ষমতায় আসার আগে অবস্থা খুব ভালো ছিল তা নয়। কিন্তু এখন অবস্থা অনেক বেশি খারাপ।
জাতিসংঘ বলছে, প্রায় ২৩ মিলিয়ন আফগান নাগরিক চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। ৯৫ শতাংশ মানুষের পর্যাপ্ত খাবার নেই। দেশটিতে শিশুরা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। ইন্দিরা গান্ধী শিশু হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অপুষ্টি গ্রীষ্মকালে একটি সাধারণ সমস্যা। শরৎকালে রোগীর সংখ্যা কম হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে অপুষ্টির শিকার রোগী বেশি পাচ্ছেন তারা।
প্রতিদিন সেবা চালিয়ে গেলেও কয়েক মাস ধরে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন দেয়া হচ্ছে না বলে জানান এ চিকিৎসক। বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীরই টিকিট কেনার অর্থ নেই। হাসপাতালে খাবারের অর্থও যোগান দিতে পারছেন না তারা।
মানবাধিকারের প্রশ্নে আর একটি বিষয় খুব সামনে আসছে; তা হলো নারী অধিকার বিষয়। নারীদের কণ্ঠকে রোধ করার এবং তাদের প্রতি অমানবিক আচরণের বিষয়টি তাদের ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনামলে সারা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে। এমন আশঙ্কার মধ্যে নারীদের কাজে যোগদান, শিক্ষা, ব্যবসার মতো বিষয়গুলোতে দেখা গিয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।
পাশাপাশি এ মুহূর্তে আফগানিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ নিরাপত্তা। প্রায় ছয় মাস আগে মেয়েদের ‘সাইয়েদ আল-শাহাদা স্কুলে’ বড় ধরনের হামলা চালায় ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএস-কে)। শতাধিক ছাত্রী প্রাণ হারায় সেই হামলায়। তালিবান ক্ষমতায় আসার আগে এ হামলা হলেও বর্তমানে আইএস-কে আফগানিস্তানের শিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার একটি অঞ্চল। অনেকে আবার মধ্যপ্রাচ্যের অংশ হিসেবেও গণ্য করে। আফগানিস্তানের পূর্বে ও দক্ষিণে পাকিস্তান, পশ্চিমে ইরান, উত্তরে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে গণচীন। আফগানিস্তানের সাথে এই সমস্ত রাষ্ট্রের সীমান্ত থাকলেও আফগানিস্তানের রাজনীতিকে ঘিরে আবর্তিত হয় আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়াদি।
আফগানিস্তানে তালিবানদের ক্ষমতা গ্রহণের পর বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে চীন ও পাকিস্তান অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আফগানিস্তানকে ঘিরে কৌশল নিচ্ছে। তালেবনাদেরকে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশে আঞ্চলিক প্রভাব বজায় রাখতে চীন এবং পাকিস্তান তৎপর।
এসডব্লিউ/এসএস/১২১৮
আপনার মতামত জানানঃ