ইউরোপে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘গভীর উদ্বেগ’ সৃষ্টি করেছে। করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকলে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে মহাদেশটিতে আরো ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এভাবে বাড়তে থাকলে ইউরোপ আবারও করোনাভাইরাস মহামারির কেন্দ্র হতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ইউরোপজুড়ে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন আশঙ্কা করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
গত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ করোনায় শনাক্ত হওয়ার পর ডব্লিউএইচও তরফ থেকে এ সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হলো।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর ইউরোপবিষয়ক প্রধান হ্যান্স ক্লুজ বলেছেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউরোপে আরও ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এ জন্য অপর্যাপ্ত টিকা গ্রহণকে দায়ী করেছেন হ্যান্স ক্লুজ। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আমাদের অবশ্যই কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।’
হ্যান্স ক্লুজ বলছেন, ইউরোপের ৫৩টি দেশ এবং মধ্য এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো আগামী সপ্তাহগুলোতে করোনাভাইরাস মহামারি পুনরুত্থানের প্রকৃত হুমকির সামনে বা ইতোমধ্যে সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইউরোপের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। সংক্রমণের গতি পর্যবেক্ষণ করার পর মনে হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রাণহানির সংখ্যা আরও ৫ লাখ বাড়বে।
ক্লুজ জানান, বিশ্ববাসী ফের মহামারি শুরু হওয়ার পয়েন্টে রয়েছে। এক বছর আগের মতো ইউরোপ আবারও মহামারির উৎসকেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি যথেষ্ট পরিমাণ টিকা না থাকাকে দোষারোপ করেন।
ডব্লিউএইচও’র এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ভাইরাস সম্পর্কে আরও বেশি জানেন এবং এটি মোকাবিলা করার জন্য ভালো সরঞ্জামও রয়েছে। তবে কিছু এলাকায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা শিথিল ও টিকা প্রয়োগের হার কম হওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
তার ভাষায়, গত সপ্তাহে করোনার নতুন সংক্রমণে ৫৩টি দেশে হাসপাতালে ভর্তির হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ক্লুজের আশঙ্কা, এভাবে যদি চলতেই থাকে তবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউরোপ আরও ৫ লাখ মৃত্যু দেখতে পাবে।
বিশ্ববাসী ফের মহামারি শুরু হওয়ার পয়েন্টে রয়েছে। এক বছর আগের মতো ইউরোপ আবারও মহামারির উৎসকেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি যথেষ্ট পরিমাণ টিকা না থাকাকে দোষারোপ করেন।
এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ইউরোপে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছিল। হ্যান্স জানান, সম্প্রতি ইউরোপের ৫৩টি দেশে সংক্রমণ যে গতিতে বাড়তে শুরু করেছে, তা না কমলে ফের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
এই পরিস্থিতিতে টিকা প্রয়োগের গতির কথা না ভেবে সংক্রমক রোগের ক্ষেত্রে যা যা করা উচিত, সেই অনুযায়ী করোনাবিধি তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও। তিনি বলেন, ‘যেসব দেশে টিকা দেওয়ার হার কম, সেখানে হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি। পরীক্ষা, শনাক্ত, শারীরিক দূরত্ব এবং মাস্ক ব্যবহারের মতো পদক্ষেপগুলো এখনও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ।’
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপজুড়ে টিকা দেওয়ার হারে গতি কমেছে। যদিও স্পেনের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। অপর দিকে ফ্রান্স ও জার্মানিতে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৬৮ ও ৬৬ শতাংশ। অপর দিকে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশে এ হার এখনো অনেক কম। এ ছাড়া গত মাসের মধ্যে মাত্র ৩২ শতাংশ রাশিয়ান পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছেন।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রেও শিথিলতা দেখা গেছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাকেও দায়ী করেছেন হ্যান্স। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোসহ ৫৩টি দেশ এ অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪ লাখ মানুষ মারা গেছেন।
ডাব্লিউএইচও-র বক্তব্য, একদিকে টিকাকরণের গতি মন্থর, অন্যদিকে দেশগুলি জীবনযাপন কার্যত স্বাভাবিক করে দিয়েছে। দুইয়ের ফল চতুর্থ ঢেউ। মোট ৫৩টি দেশ নিয়ে ডাব্লিউএইচও-র ইউরোপীয় জোন। এর মধ্যে কয়েকটি মধ্য এশিয়ার দেশও আছে। সেখানেও পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে জানানো হয়েছে। ডাব্লিউএইচও-র আশঙ্কা, পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
জার্মানিতে গত কয়েকদিনে কোভিড সংক্রমণ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ হাজার মানুষ। যুক্তরাজ্যে সংখ্যাটি ৩৭ হাজার। গত কিছুদিনে রাশিয়ায় আট হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনে মারা গেছেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। ইউক্রেনে গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৭ হাজার ৩৭৭ জন।
ডাব্লিউএইচও জানিয়েছে, গোটা ইউরোপেই সংক্রমণের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। গত কয়েক সপ্তাহে সব মিলিয়ে ৫৫ শতাংশ সংক্রমণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফের লকডাউন হতে পারে বলেও মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। ডাব্লিউএইচও অবশ্য টিকাকরণে আরো গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫০৮
আপনার মতামত জানানঃ