বন্যায় পর্যদুস্ত ভারত তিস্তা ব্যারেজের গাজলডোবা অংশের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে এর ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশকে প্লাবিত করা নতুন কোন ঘটনা নয়। এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধু রাষ্ট্রের আড়ালে ভারতের এই স্বার্থপরতা বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিয়মিত দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠেছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসফাউ-দৌলা জানান, “তিস্তার পানি এখন ৭০ সেন্টিমিটারের বেশি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একারণে তিস্তা ব্যারেজ সংলগ্ন এলাকায় ‘রেড এলার্ট’ জারি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের তিস্তা ব্যারেজে যে ফ্লাড বাইপাস আছে, মানে নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমা ছাড়ালে ওই বাইপাস খুলে যায়, সেটি ভেসে গিয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে নদীতে পানি বাড়তে থাকে। আজ বুধবার সকাল ৬টার সময় প্রথম বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে শুরু করে।”
তিনি বলেন, “ভারতীয় অংশে গত কয়েকদিন প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে যাওয়ায়, তারা তিস্তা ব্যারেজের গজলডোবার ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে। যে কারণে আমাদের এখানে হঠাৎ এমন পানি বৃদ্ধি ঘটেছে।”
তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এদিকে, লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর বিবিসিকে বলেছেন, বছরের এই সময়ে হঠাৎ করে এমন পানি বৃদ্ধি বা বন্যার আশংকা অস্বাভাবিক ঘটনা। লালমনিরহাটের তিনটি উপজেলার অনেকগুলো গ্রাম, বিশেষ করে তিস্তার চর এলাকাগুলো ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে।
সাধারণত তিস্তার পানির প্রবাহ ৫২.৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত স্বাভাবিক বিবেচনা করা হয়। পানির প্রবাহ ওই সীমার ওপরে গেলে তাকে বিপৎসীমা বিবেচনা করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, মঙ্গলবার রাতে তিস্তার পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
তিস্তা পাড়ের অনেকে জানান, গত দু’তিন বছরে এবারই হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে রাতে কী হবে বলা যাচ্ছে না। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় বিকাল তিনটায় বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়।
ভারতে ভয়াবহ বন্যা
এর আগে দক্ষিণ ভারতের কেরালায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পর নদীগুলোর কূল ছাপিয়ে ওঠা ব্যাপক প্লাবনে অন্তত ২৪জনের মৃত্যু হয়েছে, শহর ও গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন শিশু। বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে, ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বহু ঘরবাড়ি ভেসে গেছে এবং কেরালা রাজ্যের কোত্তাইয়াম জেলায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এলাকায় তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বন্যার পানিতে বাস প্লাবিত হওয়ায় আটকে পড়া যাত্রীদের সেখান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে। রাজ্যের সবচেয়ে উপদ্রুত দুটি জেলা হল কোত্তাইয়াম এবং ইডুক্কি। কয়েকদিন ধরে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক জায়গায় প্রাণঘাতী ধস নেমেছে। বহু ছোট ছোট গ্রাম সংযোগকারী সেতু স্ফীত হয়ে ওঠা নদীর পানির তোড়ে ভেসে গেছে।
উদ্ধারকারী দলগুলো নিখোঁজদের সন্ধানে কাজ করছে। ইডুক্কিতে একজন আর কোত্তাইয়ামে একজনের খোঁজ এখনও পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে মানুষ আটকা পড়ে আছে, সেখানে তাদের সাহায্যে ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মী পাঠানোর জন্য সেনা বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং কেরালা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ১৮৪টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে আট হাজারের ওপর মানুষকে খাদ্য, বিছানা ও কাপড়চোপড় দেয়া হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ