তালিবানের কাবুলের মসনদ দখলের পর দেশটির শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত একপ্রকার ভেঙে পড়েছে। দেশটিতে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অবস্থার দ্রুত উন্নতি সম্ভব না হলে, দেশটির আগামী প্রজন্ম দীর্ঘমেয়াদে ভুগবে। ধ্বংস হবে শিশুদের ভবিষ্যৎ।
এদিকে, জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে যে, বছরের শেষের দিকে আফগানিস্তানে পাঁচ বছরের কম বয়সী দশ লাখ শিশুর জীবন ‘তীব্র মারাত্মক অপুষ্টি’র কারণে হুমকিতে রয়েছে। আরও ৩২ লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটি সতর্ক করে আরো জানায়, তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ছাড়া অন্তত ১০ লাখ মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে দেশটিতে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘোর। সেখানে অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছে।
এ প্রসঙ্গে প্রদেশের জনস্বাস্থ্য পরিচালক মোল্লা মোহাম্মদ আহমদী বলেন, ক্ষুধার প্রভাবের জন্য প্রায় ৩০০ জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে শত শত শিশু অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের শিশু সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেছেন, তিনি ঘোরের মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেননি কিন্তু আশঙ্কা করছেন ‘অনেক শিশু চূড়ান্ত মূল্য দিচ্ছে’।
ইউনিসেফের সালাম আল-জানাবি বলেন, এজেন্সির মনিটরিং নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়েছে এবং ঘটনাপ্রবাহের রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে, কিন্তু ‘আমরা খুব বেদনাদায়কভাবে সচেতন যে এটি এমন কিছু, আমরা যার দ্বারপ্রান্তে বা মাঝখানে আছি।’
আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে গভীরভাবে ডুবে গেছে। খরা, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং চাকরি হারানোর প্রভাব আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং অর্থায়নের সাথে বন্ধ হয়ে গেছে।
এর মধ্যে তালিবান নেতাদের নারীশিক্ষা বিরোধী অবস্থানসহ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে মূল্যায়নের প্রবণতা দেশটির শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেন, গত ২০ বছরে বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নেওয়া স্নাতক ডিগ্রি কোনো কাজে আসবে না।
হাক্কানি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই এমন শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, যারা শিক্ষার্থীদের এবং আগত প্রজন্মকে দেশে এবং আফগানিস্তানে যে মূল্যবোধ রয়েছে তা শেখাতে পারে।
মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে উচ্চশিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেন, আফগানিস্তানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন এবং ধর্মীয় পড়াশোনা করেছেন তাদের চেয়ে কম মূল্যবান আধুনিক গবেষণার মাস্টার্স ও পিএইচডিধারীরা।
এর আগে আফগান তালিবানের শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলভি নুরুল্লাহ মুনিরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তালিবানের সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনিরকে বলতে শোনা যায়, ‘এখনকার দিনে পিএইচডি ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই। আপনারা দেখুন, ক্ষমতায় থাকা মোল্লা ও তালিবান কারওই পিএইচডি, এমএ, এমনকি হাইস্কুল ডিগ্রিও নেই। কিন্তু তারা সবার সেরা।’
এরপর আফগানিস্তানের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে খুললেও, মাধ্যমিক স্তরের মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় তালিবান সরকার। তালিবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা জানায়, সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালু হচ্ছে। পুরুষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে নারী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ফিরতে পারবেন কিনা, এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তালিবান সরকারের এই আদেশে বহু শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
তালিবানের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এবারের তালিবান শাসনামল ১৯৯৬-২০০১ সালের সময়ের মতো হবে না। ওই সময় নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, মেয়েদেরকে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দিলেও ক্লাসে ছেলে-মেয়েদের আলাদা বসার আদেশ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে স্পষ্টভাবেই তালিবান ক্ষমতা দখলের পর নারীদের শিক্ষা ও কাজের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও তা থেকে সরে আসছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে না গোষ্ঠীটি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫১৪
আপনার মতামত জানানঃ