ফাইজার বায়োএনটেক টিকার দুই ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পর এর কার্যকারিতা ৪৭ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। গতকাল সোমবার প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। এর আগে নানা গবেষণায় বলা হয়েছিল, করোনার টিকাগুলো কমপক্ষে ছয় মাস সুরক্ষা দেয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সংস্থা ফাইজারের বুস্টার ডোজ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে এ তথ্য উঠে আসলো। সোমবার এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলো সেটি বিবেচনায় নিয়েছিল।
এর আগে গত আগস্টে এই তথ্য-উপাত্ত পিয়ার রিভিউয়ের (স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা) আগে প্রকাশ করা হয়েছিল। এ গবেষণায় ফাইজার এবং কায়সার পারমানেন্টি গবেষকরা ৩০ লাখ ৪০ হাজার মানুষের ই নথি বিশ্লেষণ করেন। নথি বিশ্লেষণে টিকার প্রয়োগের আগে এবং টিকা প্রয়োগের পরের চিত্র তুলে ধরা হয়। অর্থাৎ ২০২০ এবং ২০২১ সালের তথ্যের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
পর্যালোচনা অনুযায়ী, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে অন্তত ছয় মাস ফাইজারের টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশের মতোই থাকে। এমনকি ডেল্টা ধরনের ক্ষেত্রেও সমান কার্যকর। এরপর কার্যকারিতা কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণের কোনো ধরন দায়ী নয়।
বিশ্লেষণে বলা হয়, দুই ডোজ দেওয়ার পর প্রথম মাস ফাইজারের এই টিকা ৮৮ শতাংশ কার্যকর থাকে, কিন্তু ছয় মাস পর এই কার্যকারিতা ৪৭ শতাংশ কমে যায়।
এই টিকা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর এবং প্রথম মাসে এটি ৯০ শতাংশ কার্যকর। তবে চতুর্থ মাসে এর কার্যকারিতা ৫৩ শতাংশ কমে যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বয়স্ক ও সংক্রমণের উচ্চ-ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ফাইজারের বুস্টার ডোজের অনুমোদন দিয়েছে।
যদিও ফাইজারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চিফ মেডিকেল অফিসার লুইস জোডার বলেন, “আমাদের ভ্যারিয়েন্ট বিষয়ক বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ডেল্টাসহ করোনাভাইরাসের অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ফাইজার টিকা কার্যকর।”
এদিকে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের টিকার আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি আরও ২৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
এ নিয়ে ফাইজার বায়োএনটেকের ৩৬ লাখ ৪ হাজার ৪৮০ ডোজ টিকা পেল বাংলাদেশ। এর পুরোটাই এসেছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। গত ৩১ মে প্রথম চালানে ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা আসে। ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় চালানে আসে আরও ১০ লাখ ৩ হাজার ৮৬০ ডোজ টিকা।
২১ জুন দেশে ফাইজারের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। সূত্র মতে, এবার যে ২৫ লাখ ডোজ এসেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র সরকার অনুদান হিসেবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দিয়েছে।
ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে হয় হিমাঙ্কের নিচে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। ফলে এ টিকা সংরক্ষণ করতে আল্ট্রা কোল্ড ফ্রিজারের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহনের জন্য থার্মাল শিপিং কনটেইনার বা আল্ট্রা ফ্রিজার ভ্যান লাগে।
সাধারণ রেফ্রিজারেটরে ২ ডিগ্রি থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হলে এ টিকা ৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ টিকা দুই ঘণ্টা টেকে। সংরক্ষণ আর পরিবহনে জটিলতার কারণে প্রাথমিকভাবে কেবল ঢাকায় বাছাই করা কয়েকটি কেন্দ্রে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয় সে সময়।
এখন ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের সক্ষমতা আরও বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি জায়গায় ২১টি ফ্রিজার পাওয়া গেছে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও আরও ২৯টি নতুন ফ্রিজার কিনছে।
তিনি আরও বলেন “আমরা জানতাম না কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউটগুলোয় এ ধরনের টিকা রাখার সক্ষমতা আছে। তারা বীজ সংরক্ষণের জন্য এ ধরনের ফ্রিজার রাখে। এ ধরনের বেশকিছু সোর্স আমরা পেয়েছি, একুশটার মত। আরও ২৯টি ফ্রিজ আমরা কিনতে দিয়েছি। এটা নভেম্বরের মধ্যে আমরা পেয়ে যাব। সেক্ষেত্রে আমাদের নতুন করে আর কিছু লাগবে না, আমরা ফাইজারের টিকা সংরক্ষণ করতে পারব।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “ফাইজারের টিকা যে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, তাতে বাংলাদেশে ৭০ লাখ ডোজ টিকা সংরক্ষণ করা যাবে।”
বাজারে যত টিকা আছে, তার মধ্যে কেবল ফাইজারের টিকাই ১৮ বছরের কম বয়সীদের দেওয়া যায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের এ টিকা দেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষামূলকপ্রয়োগে আরও কম বয়সীদের জন্যও এ টিকা নিরাপদ বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা বলেছে ফাইজার-বায়োএনটেক।
বাংলাদেশেও স্কুলশিশুদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার একটি আলোচনা ছিল। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করলে তবেই বাংলাদেশ শিশুদের টিকা দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০২২
আপনার মতামত জানানঃ