ফ্রান্সে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলার অজুহাতে সেদেশে মুসলমানদের ওপর চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ফ্রান্সের মসজিদ ও ইসলামিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ফ্রান্সে সরকারিভাবে একের পর এক মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে সে দেশের মুসলিমরা বিপাকে পড়ছেন। গত এক বছরে ফ্রান্স সরকার ৩০টির বেশি মসজিদ বন্ধ করেছে। বৃহস্পতিবার এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে আনাদোলু এজেন্সি।
মুসলিম সম্প্রদায় ও তাদের মসজিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে ফ্রান্স সরকার। ফরাসি কর্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপের কারণে, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৯ মসজিদ পরিদর্শন শেষে ৩০ মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মসজিদ বন্ধ করার বিষয়ে লে ফিগারো পত্রিকাকে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী আইনে এসব মসজিদ বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী আইন প্রণয়ন করার আগে, ২৪ হাজার ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করে ফ্রান্সের পুলিশ উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ৬৫০ ধর্মীয় স্থান বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালে ৮৯ মসজিদ পরিদর্শন করা হয়। এরমধ্যে এক তৃতীয়াংশ মসজিদকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণে। এছাড়া সার্তে, মুরথে-এট-মোসেল, কোট-ডি’অর, রোন ও গার্ড অঞ্চলে আরো ছয়টি মসজিদ বন্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
যে আইনের আওতায় ফ্রান্স এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা শুধু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও এনজিওর সমালোচনার বিষয়বস্তু নয়, জাতিসঙ্ঘও এ আইনের সমালোচনা করেছে। কারণ, এ আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে কোনঠাসা করা হচ্ছে।
ফ্রান্সের জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক কর্তৃপক্ষের এক রিপোর্টে দেখা গেছে ফ্রান্সে মুসলিম বিরোধিতা বাড়ছে। গত বছর করোনা মহামারীতে মধ্যে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
মুসলিম ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কুসংস্কার ও অসহিষ্ণুতা বাড়ছে বলে জানিয়েছে দ্যা ন্যশনাল কনসালটেটিভ কমিশন অন হুম্যান রাইটস (সিএনসিডিএস)।
গত বছর ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসলাম, ইহুদি ও বর্ণবাদের বিরোধিতা বিষয়ক কর্মকাণ্ড ও হুমকির সাথে সংশ্লিষ্ট অভিযোগ এসেছে এক হাজার ৪৬১টি। আগের বছর ২০১৯ সালে এমন অভিযোগ ছিল এক হাজার ৯৮৩টি।
ওই প্রতিবেদনে ইহুদি ও বর্ণবাদের বিরোধিতা বিষয়ক কর্মকাণ্ড ও হুমকির সংখ্যা কমলেও মুসলিম ও ইসলাম ধর্মের বিরোধীতা বেড়েছে ৫২ শতাংশ। ২০১৯ সালে ২৩৪টি মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ২০২০ সালের শেষ চার মাসে মুসলমানদের লক্ষ্য করে বহু প্রতিহিংসমূলক ঘটনা ঘটানো হয়।
এ সময় ফ্রান্সে বেশ কয়েকটি আক্রমণকে কেন্দ্র করে এসব প্রতিহিংসমূলক ঘটনার সূত্রপাত হয়। যেমন : শার্লি হেবদো পত্রিকার প্রাঙ্গনে ছুরি হামলা, স্কুলশিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি হত্যা ও অক্টোবর মাসে নিস শহরের গির্জায় হামলা। স্যামুয়েল প্যাটি হজরত মোহাম্মদ সা: এর ব্যঙ্গচিত্র দেখালে তাকে হত্যা করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে ফ্রান্সের মানুষ সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিষ্ণু আচরণ করলেও মুসলমানদের প্রতি তাদের বিদ্বেষ বাড়ছে। অনেক ফ্রেন্স নাগরিক মনে করেন, ইসলাম ধর্ম ফ্রান্সের জন্য হুমকি স্বরূপ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৮০২
আপনার মতামত জানানঃ