ফ্রান্সের সরকারের ভাষায় ধর্মীয় ‘চরমপন্থার’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘ব্যাপক ও নজির’ পদক্ষেপ নিয়েছে। ইসলামের নামে উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অভিযোগে ছয়টি মসজিদ বন্ধ ও বেশকিছু ইসলামি সংস্থা নিষিদ্ধ করছে ফ্রান্স। দেশটির জাতীয় দৈনিক লা ফিগেরোর বরাত দিয়ে করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
ফ্রান্সে বর্তমানে দুই হাজার পাঁচ শয়ের বেশি মসজিদ চালু আছে। এর মধ্যে ৮৯টি মসজিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দেশটি।
তবে ফরাসি প্রজাতন্ত্রের আইন মতে কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধের অনুমোদন নেই। শুধুমাত্র সন্ত্রাসে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হলে এবং নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন হলে তা বন্ধের অনুমোদন আছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরার্দ দারমানিন মঙ্গলবার লা ফিগেরোকে জানান, ফ্রান্সের কোন কোন এলাকা ও সংস্থা থেকে উগ্রপন্থী ইসলাম ও জঙ্গিবাদ ছড়ানো হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ব্যাপক ও বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছিল দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। সেই থেকে প্রায় ১০ মাসের অনুসন্ধানে ৮৯টি স্থান ও সংস্থার একটি তালিকা করেন গোয়েন্দারা। সরকারকে দেওয়া প্রতিবেদনে জানান, তালিকাভূক্ত এসব স্থান ও সংস্থা থেকেই ছাড়ানো হচ্ছে ইসলামি উগ্রপন্থা ও জঙ্গিবাদ।
লা ফিগারোকে দারমানিন জানান, যে ছয়টি মসজিদকে বন্ধ ঘোষণা করা হবে, সেগুলোর নাম এই তালিকায় রয়েছে। রাজধানী প্যারিসসহ ফ্রান্সের পাঁচটি শহরে রয়েছে এই মসজিদগুলো। ফ্রান্সের ইসলামপন্থী প্রকাশনা সংস্থা নাওয়া এবং দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ অধিকারবাদী অন্যতম সংগঠন এলডিএনএর (ব্ল্যাক আফ্রিকান ডিফেন্স লীগ) নামও তালিকায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন দারমানিন। তালিকায় থাকা আরও চার সংস্থাকে আগামী নভেম্বরের মধ্যে নিষিদ্ধ করা হবে।
নাওয়া প্রকাশনির প্রধান কার্যালয় ফ্রান্সের অ্যারিজ শহরে। এই প্রকাশনার কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টরা ইহুদিদের নির্মূল করা ও সমকামীদের পাথর ছুড়ে হত্যার পক্ষে প্রচারকাজ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে, এলডিএনর বিরুদ্ধে অভিযোগ— গত বছর উগ্রপন্থি জঙ্গিরা যখন ফ্রান্সে একের পর এক হত্যা চালাচ্ছিল, সে সময় এই সংগঠনের কর্মীরা গত বছর জুনে প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে ফ্রান্সের সরকারের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা ছড়ানোর’ অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিল।
এর আগে নিরাপত্তা বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের অজুহাতে আরো ১৭টি মসজিদ বন্ধ করেছে ফ্রান্স। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদের কথা উল্লেখ করে ফরাসি সরকার প্রজাতন্ত্রের মূল্যাবোধের সনদ শিরোনামে একটি আইন প্রকাশ করে। অতঃপর তা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাশ হয়।
গত বছর অক্টোবর মাসে কিছু কট্টরপন্থী ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি হামলা চালায়। এর মধ্যে একজন শিক্ষকের শিরশ্ছেদের ঘটনা ঘটে, যিনি ক্লাসে আলোচনার সময় মহানবী (সা.)-এর কার্টুন দেখিয়েছিলেন।
ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস ফ্রান্সে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে সিরিজ হামলার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ফ্রান্স হচ্ছে অন্যতম ইউরোপীয় দেশ, যেখান থেকে শত শত তরুণ আইএসে যোগ দিয়েছে। ফ্রান্সে জন্মানো, শিক্ষিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ম পরিবর্তনকারী এসব তরুণ সিরিয়ায় গিয়ে হাজির হয়েছে। পাশাপাশি অনলাইনভিত্তিক উগ্রপন্থা বেড়ে চলেছে। তরুণদের মধ্যে, বিশেষ করে শহরতলিতে উচ্চ হারের বেকারত্ব এবং আরব ও আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বৈষম্য ফ্রান্সের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে নতুন অনেক কিছু যুক্ত করছে।
ফ্রান্সের মুসলমানরা এখন ক্রমবর্ধমানভাবে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভীতির মধ্যে থাকবেন বলে বিশ্লেষকদের মত। জনপ্রিয়, অতি ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো এখন ঘৃণার আগুন আরও উস্কে দেবে বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৮
আপনার মতামত জানানঃ