বাংলাদেশে বিরতিহীনভাবে ধর্ষণ বেড়েই চলছে, যার প্রতিকারের কোনো উদ্যোগ কোনো মহল থেকে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০৮ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বিগত নয় মাসে মোট ৯৭৫ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ১১টি জাতীয় পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে নারী ও শিশু নিয়ে কাজ করা দুটি সংগঠন।
২৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নারী নিরাপত্তা জোট ও আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট এ তথ্য জানায়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক। সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম প্রমুখ।
সংগঠন দুটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের জন্য নয় দফা দাবি জানিয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। দাবি আদায়ে তারা বুধবার ৪০ জেলায় একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে। মানববন্ধন শেষে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেবে। নয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু এবং তাদের পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ, ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ ইত্যাদি।
বক্তারা বলেন, ১ হাজার ৭৮ শিশু শারীরিক নির্যাতনসহ নানা সহিংসতার শিকারসহ হত্যার শিকার হয়েছে ৪৪৫ শিশু। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ জন নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হন ২৭৯ নারী এবং পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ নারী।
নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন বাড়া কিংবা নারী ও শিশু ধর্ষণ বাড়ার কারণ হিসেবে অনেকই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে দেশে শিশুদের ওপর ধর্ষণের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।
শিশুদের ওপর নির্যাতনের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন। তাঁর মতে, মূলত দরিদ্র শ্রেণীর শিশুরা বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। শ্রমজীবী বাবা-মায়েদের অনুপস্থিতিতে এইসব শিশুদের দেখার কেউ না থাকার কারণে ধর্ষণের মত সামাজিক ব্যধির শিকার হচ্ছে শিশুদের অধিকাংশ অংশ। এছাড়াও কর্মজীবী নারী এবং নারী গৃহকর্মীরা ধর্ষণের ঝুঁকিতে থাকছে বেশি। বিচার সম্পর্কে অজ্ঞতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেকেই আদালত বা পুলিশের কাছে যেতে পারছেন না বলে ধর্ষণের মত অপরাধ বেড়ে চলছে বলে মাহবুবা নাসরিন মনে করেন।
অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিনের মতে, ‘ অনেকে শিশু বা অভিভাবকই জানে না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়। অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনাকে সামাজিকভাবে মিটমাট করার নামে ধামাচাপা দেওয়া হয়, যার ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সমাজে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে সাজা হয় এবং মানুষ তা দেখে সচেতন হয়’।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা প্রক্রিয়া শেষ করার কথা থাকলেও ধর্ষণের মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে। ধর্ষণকে সমাজ থেকে নির্মূল করতে হলে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন নারী ও শিশু অধিকার কর্মীরা।
মিই/নসদ/১৮১৫
আপনার মতামত জানানঃ