বিশ্বের প্রত্যেককে করোনার ভ্যাক্সিন দেয়ার মত পর্যাপ্ত পরিমান উৎপাদন করা সম্ভব হবে মনে করে দিয়েছেন স্টেফেন ব্যানসেল। এর ফলে করোনা ভাইরাস কেবল একটি মৌসুমী ফ্লু হয়ে থেকে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনি।
করোনা মহামারি আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন মডার্নার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টেফেন ব্যানসেল। ভ্যাকসিন উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিশ্বজুড়ে টিকার বিতরণের প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন তিনি। যদিও অনেক নিম্ন আয়ের দেশও এখন ভ্যাকসিন অনুদানের অপেক্ষায় রয়েছে।
সুইস সংবাদপত্র নিউ জুরচেয়ার জেইতুং’কে স্টেফেন বলেন, শিগগিরই ‘বিশ্বের সবাইকে’ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। ফলে করোনাভাইরাস একটি মৌসুমি ফ্লু’তে রূপান্তরিত হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন তিনি।
স্টেফেন বলেন, ‘হয় আপনি ভ্যাকসিন নিবেন, অন্যথায় অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। হয়তো হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। গত ছয় মাসে যে হারে ভ্যাকসিন উৎপাদন বেড়েছে, সেটি বিবেচনা করলে পরের বছরের মাঝামাঝিতেই পৃথিবীর প্রত্যেককে টিকা দেওয়ার মতো ভ্যাকসিন থাকা উচিত।’
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধনী দেশগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ নাগরিক ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন। অপরদিকে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে এ সংখ্যা রয়েছে প্রায় ২০ শতাংশে।
হয় আপনি ভ্যাকসিন নিবেন, অন্যথায় অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। হয়তো হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। গত ছয় মাসে যে হারে ভ্যাকসিন উৎপাদন বেড়েছে, সেটি বিবেচনা করলে পরের বছরের মাঝামাঝিতেই পৃথিবীর প্রত্যেককে টিকা দেওয়ার মতো ভ্যাকসিন থাকা উচিত।
– স্টেফেন ব্যানসেল
অন্যদিকে গত সপ্তাহে ৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সীদের এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা আমেরিকানদের জন্য ফাইজার-বায়োটেক ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
তবে বিশ্বের সব দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ভ্যাকসিন দেওয়ার আগ পর্যন্ত বুস্টার ডোজ না দেওয়ার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিনের অসম বণ্টনকে ‘অশালীন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক অধিবেশনে তিনি বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞানের দিক দিয়ে এগিয়ে গেলেও নৈতিকতার প্রশ্নে উত্তীর্ণ হতে পারিনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানীরাও বলছেন, সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলো অত্যন্ত কার্যকর এবং দীর্ঘ দিন অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম। এসব ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে মারাত্মক উপসর্গ, হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুহার একেবারেই কমে যায়।
সাম্প্রতিক বহু গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, করোনার মৃদু উপসর্গ ঠেকাতে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। তবে গুরুতর উপসর্গ থেকে সুরক্ষা দিতে করোনার ভ্যাকসিন বহুদিন অব্যাহতভাবে কার্যকর থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশ জটিল, ফলে ভ্যাকসিন গ্রহণের বহুদিন পরেও অ্যান্টিবডি কাউকে গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
বিজ্ঞানীদের পর্যালোচনার উপসংহার হলো, ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো গবেষণাই এখনই সব মানুষের জন্য একটি বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছে না। কেননা, ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে গুরুতর উপসর্গের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা দীর্ঘদিন টিকে থাকে।
বুস্টার ডোজ নিয়ে ভিন্ন আশঙ্কাও করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, যদি অপ্রয়োজনীয় ডোজ শরীরে উল্লেখযোগ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাহলে বুস্টার ডোজ গ্রহণের প্রভাবে লাভের চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি হবে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ