প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এর তাণ্ডবে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি যুক্তরাষ্ট্র। যদিও ভাইরাসটির চিকিৎসায় ইতোমধ্যে টিকাও আবিষ্কৃত হয়েছে, তাতেও পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হচ্ছে না বহুরূপী এই ভাইরাসকে। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য ট্যাবলেট জাতীয় ওষুধ আবিষ্কারের কাজ করে যাচ্ছে দেশটি। এই ট্যাবলেটের মাধ্যমে করোনার হালকা রোগীরা বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে পারবেন এবং গুরুতর অসুস্থতা ও হাসপাতালের চিকিৎসা এড়ানো সম্ভব হবে।
করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হলেও কার্যকর ট্যাবলেট উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ট্যাবলেট আবিষ্কারে এরই মধ্যে ৩০০ কোটি ডলার খরচের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শীঘ্রই মুখে সেবনযোগ্য ট্যাবলেট আবিষ্কারের আশা করছেন গবেষকরা। অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের ওষুধ খান মানুষ, সে রকমই কোভিডের জন্যও ওষুধ পাওয়া যেতে পারে, এমনটাই দাবি করছেন আমেরিকার গবেষকদের একাংশ। খবর আনন্দবাজার
কোভিড চিকিৎসার ওষুধের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মেরেক এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকসের মোলনুপিরাভির। এমনটাই দাবি করছেন আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ-এর একটি বিভাগের ডিরেক্টর কার্ল ডাইফেনবাক। ওই ওষুধ নিয়ে ইতোমধ্যেই জোরকদমে গবেষণা চলছে। টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা ফাইজারও এই রকম একটি ওষুধ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। নজরে রয়েছে রসে এবং অ্যাটিয়া ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি ট্যাবলেটও।
ওই বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, পরীক্ষার স্তর পেরোলে এবং ছাড়পত্র মিললেই বাজারে চলে আসবে এই ওষুধ। শরীরে করোনা ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ধরনের ওষুধ খাওয়া শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। এতে উপসর্গ বড় আকার নিতে পারে না। উত্তর ক্যারোলাইনা চ্যাপেল হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট টিমোথি সিয়াহান বলেন, ‘শুধু নিজেকে সুস্থ করে তোলাই নয়, অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছ়ড়িয়ে পড়া রুখতেও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে এই ওষুধ।’
রেমডেসিভিরের প্রাক-ক্লিনিক্যাল গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সিয়াহান। তিনি জানান, ইঁদুরের শরীরে মোলনুপিরাভির প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, সার্স-কোভ-২ প্রজাতি রুখে দিচ্ছে ওই ওষুধ। পরে ওই পদ্ধতিতেই ট্যাবলেট তৈরি করা শুরু করেছে মেরেক ও রিজব্যাক। ২০২ জন ব্যক্তির উপর ওই ওষুধ প্রয়োগ করে দেখা গেছে, শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই কমে যাচ্ছে ওই ওষুধ প্রয়োগের পর। আর কয়েক দিনের মধ্যেই ওই ওষুধের তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশিত হবে।
সেপ্টেম্বরের শুরুতেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ পর্যায়ের গবেষণা শুরু করেছে ফাইজার। দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট শীঘ্রই হাতে আসবে বলে জানিয়েছে ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাটিয়াও।
এদিকে এমন অন্তত দুটি ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আবিষ্কারের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করেছে ব্রিটিশ সরকার। এটি আবিষ্কার হলে করোনা থেকে পুনরুদ্ধারের গতি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এই পরিকল্পনা একটি নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অংশ। কারণ বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর মতে এই বছর যেকোনও সময় ব্রিটেনে করোনার আরেকটি ঢেউ আঘাত হানতে পারে।
বরিস জনসন বলেন, এই অ্যান্টিভাইরাল গবেষণা করোনার নতুন ধরনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি এই অপ্রত্যাশিত তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সহযোগিতা করবে।
ব্রিটিশ সরকার আশা করছে যে, অ্যান্টিভাইরাল টাস্কফোর্স ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের মতই সফল হবে। তাদের লক্ষ্য নতুন ধরনসহ করোনার একটি ওষুধ খুঁজে পাওয়া।
বরিস জনসন বলেন, আমাদের অ্যান্টিভাইরাল টাস্কফোর্স বিস্ময়কর চিকিৎসার সন্ধান করছে। এর মাধ্যমে আপনি বাড়িতে বসেই করোনাভাইরাসকে থামিয়ে দিতে পারেন। এটি করোনা সংক্রমণ ঠেকাবে এবং জীবন বাঁচাবে।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, তিনি ব্রিটেনকে বুস্টিং করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন টাস্কফোর্স করোনা প্রতিরোধ করে উন্নতি করতে সাহায্য করবে।
ডেক্সামেথাসন এবং হাসপাতালের ড্রাগ টিসিলিজুমাব এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার চিকিৎসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্রিটেন। দারুণ টিকাদান কর্মসূচি ও ওষুধ করোনা প্রতিরোধে ও আমাদের প্রিয়জনদের বাঁচাতে ব্যতিক্রমী অস্ত্র হিসেবে কাজ করছে।
হ্যানকক বলেন, ভ্যাকসিন ও থেরাপিস্ট টাস্কফোর্সের সফলতার মতো আমাদের অসাধারণ নতুন টাস্কফোর্স সফল হবে এবং শীঘ্রই অ্যান্টিভাইরাল ট্রিটমেন্টের সন্ধান পাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১৬
আপনার মতামত জানানঃ