মানুষের বিবর্তন শুরু হয় কবে থেকে— এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, আদিম মানুষের বাসভূমি ছিল মূলত আফ্রিকা অঞ্চলে। কয়েক লাখ বছর সেখানে কাটানোর পর তারা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে মানুষের পদার্পণ করা শেষ মহাদেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও বিষয়টি কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হিসেবেই আলোচনা হয়ে আসছে। বিষয়টি সামনে আসলেই প্রত্নতাত্বিকেরা দুই দলে ভাগ হয়ে যায় বলে বিভিন্ন মহলে রেওয়াজও শোনা যায়।
সবথেকে বেশি চর্চিত মত অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকায় মানুষের বসবাস শুরু হয় প্রায় ১৩ হাজার থেকে ১৬ হাজার বছর পূর্বে, বরফ যুগের শেষের দিকে। বিষয়টি নিয়ে অনেক গবেষকদের দ্বি-মত থাকলেও সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ এক তথ্য।
নিউ মেক্সিকোতে আদি মানুষের পায়ের ছাপের জীবাশ্ম পেয়েছিলেন গবেষকরা। নিউ মেক্সিকোতে পাওয়া পায়ের ছাপ নিয়ে গবেষণার পর একদল গবেষক বলছে, উত্তর আমেরিকায় মানুষের অস্তিত্ব কমপক্ষে ২৩ হাজার বছরের পুরোনো। যা পূর্বের ধারণার চেয়ে কমপক্ষে ৭ হাজার বছর আগের। পায়ের ছাপগুলি একটি অগভীর হ্রদের প্রান্তে নরম কাদায় গঠিত হয়েছিল, যা এখন সাদা বালির ক্ষার হয়ে প্রায় সমতলের অংশ হয়ে গিয়েছে। খবর সিএনএন, বিবিসি
নিউ মেক্সিকোতে আদি মানুষের পায়ের ছাপের জীবাশ্ম পেয়েছিলেন গবেষকরা। নিউ মেক্সিকোতে পাওয়া পায়ের ছাপ নিয়ে গবেষণার পর একদল গবেষক বলছে, উত্তর আমেরিকায় মানুষের অস্তিত্ব কমপক্ষে ২৩ হাজার বছরের পুরোনো।
হোয়াইট স্যান্ডস ন্যাশনাল পার্কে একটি শুকনো লেকের তলদেশে এই পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। ২০০৯ সালে এক পার্ক ম্যানেজার প্রথম এটি দেখতে পান। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই পদচিহ্নের জীবাশ্মের বয়স যাচাই করেন। দেখা যায় আনুমানিক ২২,৮০০ থেকে ২১,১৩০ বছর পুরনো এই জীবাশ্ম।
বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, এশিয়াকে আলাস্কার সঙ্গে যুক্ত করেছিল স্থলভূমির এক বিস্তীর্ণ অংশ। তার মাধ্যমেই প্রাচীন অভিবাসন হয়েছিল। পরে এই স্থলভূমি সমুদ্রের নিচে হারিয়ে যায়। অন্যদিকে পাথরের তৈরি সরঞ্জাম, জীবাশ্মের হাড় এবং জেনেটিক বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন প্রমাণের উপর ভিত্তি করে গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রায় ১৩,০০০ থেকে ১৬,০০০ বছর আগে উত্তর আমেরিকায় মানুষের আগমন হয়েছিল।
উত্তর আমেরিকায় ঠিক কোন সময়ে মানুষের উপস্থিতি ছিল, তার আরও সঠিক প্রমাণ দেয় এই সর্বশেষ গবেষণা। গবেষকরা লিখেছেন, ‘সাংস্কৃতিক নিদর্শন, উদ্ধার করা হাড় বা অন্যান্য প্রচলিত জীবাশ্মের তুলনায় জীবাশ্ম পদচিহ্নগুলো আরও অনস্বীকার্য এবং প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেয়।’ গবেষকরা বলছেন, এটি সময় ও অবস্থানের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বোর্নেমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন পদচিহ্ন বিশেষজ্ঞ এবং অধ্যাপক ম্যাথু বেনেট। গত বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জার্নাল সায়েন্সে তার এই গবেষণা প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক বেনেট বলেন, আমেরিকায় মানুষের বসতিস্থাপন নিয়ে বহু বছর ধরেই বিতর্ক রয়েছে। অনেক প্রত্নতত্ত্ববিদ এটিকে ধর্মীয় আবেগের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এ সংক্রান্ত খুব বেশি তথ্য না থাকায় সমস্যাও তৈরি হয়েছে।
বেনেট এবং তার সহকর্মীরা রেডিওকার্বন ডেটিং লেয়ারের মাধ্যমে পদচিহ্নের ওপর ও নিচে সংরক্ষিত থাকা জলীয় উদ্ভিদের বীজের সঠিক সময়কাল বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষকরা বলছেন, হোয়াইট স্যান্ড ন্যাশনাল পার্কের টুলারোসা অববাহিকায় পাওয়া এসব পদচিহ্ন ২১ হাজার থেকে ২৩ হাজার বছর আগের।
বেনেট বলেন, ওই সময়কাল এবং দক্ষিণপশ্চিম উত্তর আমেরিকার যে স্থানে এই পদচিহ্ন পাওয়া গেছে তাতে এটাই ইঙ্গিত করে যে, ধারণারও অনেক আগে এই মহাদেশে মানুষজন বসতিস্থাপন করেছিল।
পায়ের ছাপের আকারের উপর ভিত্তি করে, গবেষকদের ধারণা, এগুলো শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের। সর্বশেষ তুষার যুগে এরা বাস করত।
নৃতাত্ত্বিকরা জানান, ওই মানুষগুলো খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে ছিলেন। কী করে বুঝলেন বিজ্ঞানীরা? তারা দেখেছেন, আদিম পুরুষ ও নারীর প্রতি সেকেন্ডে পদক্ষেপের গতি ছিল ১.৭ মিটার। ধীরে-সুস্থে হাঁটলে যা হওয়ার কথা প্রতি সেকেন্ডে বড়জোর ১.৫ মিটার। এই দম্পতির পায়ের ছাপের মাঝে আচমকাই এক কোলের শিশুর পায়ের ছাপও দেখা গেছে। এ থেকে তাদের অনুমান— হয়তো মা ক্লান্ত হয়ে শিশুটিকে কিছুক্ষণের জন্য কোল থেকে নামিয়েছিলেন!
নৃতত্ত্ববিদদের দাবি, ফেরার পথে আর শিশুটির পায়ের ছাপ দেখা যায়নি!
কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বললেন, সেই সময়ে পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর সব প্রাণীর বসবাস ছিল। হয়তো তাদের হিংস্রতা থেকে সুরক্ষা দিতে শিশুটিকে নিরাপদ কোনও আশ্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা-মা। আদিম ওই বাবা-মা শিশুটিকে হয়তো নিরাপদ কোনও জায়গায় লুকিয়ে রেখে আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়েছিলেন। তাই ফেরার পথে আর শিশুটির পায়ের ছাপ দেখা যায়নি!
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৪
আপনার মতামত জানানঃ