বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে তার একটি হচ্ছে এ অঞ্চলকে ঘিরে জঙ্গি নেটওয়ার্ক বিস্তার। সিরিয়া-ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কার্যক্রম সীমিত হয়ে আসছে। আইএস নিয়ন্ত্রিত অনেক শহর এখন সিরিয়া তথা ইরাকের বাহিনীর দখলে। ওই সব এলাকায় যেসব জিহাদি ছিল, তারা এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালয়েশিয়ায় পালিয়ে গেছে বলে পূর্ব থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অনেকে। সেই আশঙ্কা নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তালিবানের আফগানিস্তান দখলকে কেন্দ্র করে।
মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশে আত্মঘাতী হামলার সতর্কতা জারি করেছে জাপান। এজন্য ওই ছয় দেশে অবস্থান করা জাপানিদের জনসমাগম থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে টোকিও। স্থানীয় সময় সোমবার জাপানের নাগরিকদের উদ্দেশে এক বিবৃতি দেয় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে অবস্থান করা জাপানি নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়াও এ ছয়টি দেশের ধর্মীয় স্থাপনাসহ যে কোনো জনসমাগম এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশগুলোতে আত্মঘাতী হামলা হতে পারে বলে এমন তথ্য রয়েছে জাপান সরকারের কাছে। তবে এ ধরনের হামলার আশঙ্কার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স ও মালয়েশিয়া।
এদিকে জাপান এবং ভিয়েতনাম আন্তঃসহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি প্রতিরক্ষা বিনিময় চুক্তি সই করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন।
এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বেইজিং ভিয়েতনামকে ৩০ লাখ ডোজ কোভিড টিকা উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে ভিয়েতনামের একপাক্ষিক যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুই দশকের চেষ্টাতেও আফগানিস্তানে তালিবানদের পরাস্ত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধব্যয় কমাতে শেষমেশ আফগানিস্তান থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর একে বিজয় হিসেবে দেখছে সশস্ত্র তালিবান গোষ্ঠী। তালিবানরা ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই করে আফগানিস্তানকে দখল করার ঘটনা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসবাদী ও জঙ্গি দলগুলোর জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে এএফপি।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক সমরাস্ত্র সমৃদ্ধ দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তালিবানের ধৈর্য ও সতর্ক থাকার কৌশলকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের পতন হলেও দলটি তালিবানদের অনুসরণ করতে পারে এমন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক সমরাস্ত্র সমৃদ্ধ দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তালিবানের ধৈর্য ও সতর্ক থাকার কৌশলকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের পতন হলেও দলটি তালিবানদের অনুসরণ করতে পারে এমন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক সুফেন সেন্টার থিংকট্যাংকের গবেষণা প্রধান কলিন ক্লার্ক এএফপিকে বলেন, ‘তালিবানের এই জয় বিশ্বের অন্য জিহাদি দলগুলোর জন্য প্রেরণা হয়ে দেখা দেবে। এটা তাদের বিশ্বাস করতে সহায়তা করবে যে, বিদেশি শক্তিকে চাইলে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায়, এমনকি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হলেও। আমি মনে করি ৯/১১’র ঘটনার ২০ বছর পূর্তিতে উল্লেখযোগ্য প্রোপাগান্ডা দেখতে পাব। এতে উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জিহাদিদের নৈতিক শক্তি বৃদ্ধি করবে।’
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অন এক্সট্রিমিজমের ফেলো আয়মন জাওয়াদ আল তামিমির মতে, ‘তালিবানদের ধৈর্যের এই উদাহরণ বিশ্বের অন্য অঞ্চলের জিহাদি যারা লড়াই করছে তাদের উদ্বুদ্ধ করবে। যদিও আফগানিস্তানের উগ্রবাদীদের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের মতো দলের মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্ব আফগানিস্তানে তালিবানদের উত্থানে খুশি হোক বা না হোক, অন্য জিহাদিরা একে মাইলফলক হিসেবে নেবে। অন্য দলগুলো যখন তালিবানদের আনন্দ উদযাপন করতে দেখছে, এতে তারা মনে করছে যে, তারাও যদি ধৈর্য ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে তাহলে হয়তো পশ্চিম আফ্রিকা অথবা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ওই উদযাপন তারাও করতে পারবে।’
আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা বিভাগ আল তাহবাত ইতিমধ্যেই তালিবানদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেছে যে, ‘আফগানিস্তানে তালিবানদের এই বিজয়ে পাকিস্তান, কাশ্মীর, ইয়েমেন, সিরিয়া, গাজা, সোমালিয়া ও মালির মুসলিম ও মুজাহিদিনরা উদযাপন করছে।’
তালিবান ও আইএসের মধ্যকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা খুব একটা সহজ নয়। তালিবানদের আইএসবিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা গেলেও তালিবানদের হাত ধরেই কিন্তু আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামিক স্টেট-খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি) গঠিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, তালিবান ও আইএসের মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকলেও বাস্তবতা থেকে লাভবান হবে আইএস। গত ১ জানুয়ারি থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত আইএস বিভিন্ন স্থানে ২১৬ বার হামলা চালিয়েছে। আর গত বছর একই সময়ে ওই হামলার সংখ্যা ছিল ৩৪।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৮
আপনার মতামত জানানঃ