আফগানিস্তানে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন নারীরা। এর মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালিবানের ভয় উপেক্ষা করেই কাবুল বিমানবন্দরে কাজে যোগ দিয়েছেন ১২ আফগান নারী। তালিবান ক্ষমতা দখলের আগে তারা কাবুল বিমানবন্দরেই কর্মরত ছিলেন।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে ৬ নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের আগে নারী যাত্রীদের তল্লাশি করছিলেন তারা। গত ১৫ আগস্ট তালিবান ক্ষমতা দখলের আগে কাবুল বিমানবন্দরে ৮০ জনের বেশি নারী কাজ করতেন। এর মধ্যে ১২ জন ফিরলেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তালিবানের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং শুরু থেকেই নারীদেরও কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়েছে যে, নারীরা হিজাব পরে বাইরে বের হতে পারবেন এবং নিজেদের কর্মক্ষেত্রেও ফিরতে পারবেন। তবে ঘটেছে এর উল্টো। নারীদের উপর নেমে এসেছে শরিয়াহ আইনের খড়গ।
তালিবান আফগানিস্তান দখলের আগে বিমানবন্দরে কাজ করতেন রাবিয়া জামাল নামের এক নারী। তালিবান নতুন সরকার গঠনের পর তিনি এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আবারও কাজে ফিরেছেন। তিন সন্তানের মা এই নারী বলছেন, তার আসলে আর কিছুই করার নেই।
রাবিয়া বলেন, আমার পরিবারের জন্য আমাকে অর্থ উপার্জন করতে হবে। গাঢ় নীল রংয়ের বোরকা পরে মুখ ঢেকে রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, বাড়িতে বসে থেকে আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। আমার খুব খারাপ লাগছিল।
ইসলামপন্থী গোষ্ঠী তালিবান নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় পরিষ্কার ঝুঁকি ছিল; কিন্তু তিন সন্তানের মা ৩৫ বয়সী রাবিয়ার কাজে ফেরা ছাড়া বিকল্প খুব বেশি ছিল না। নেভি-ব্লু রঙের স্যুট পরিহিত মেকাপে পরিপাটি রাবিয়া বলেন, ‘পরিবারকে সাহায্য করার জন্য আমার অর্থের প্রয়োজন।’
শনিবার বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে ছয় নারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা গল্প করছিলেন এবং একে অন্যের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠেছিলেন। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের আগে নারী যাত্রীদের তল্লাশি করছিলেন তারা।
রাবেয়ার বোন কুদসিয়া জামাল (৪৯) এএফপিকে জানান, তালিবান নিয়ন্ত্রণ নেয়ার খবরে তিনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন।
পাঁচ সন্তানের জননী এই নারী জানান, তার পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার। তিনি প্রথমে ভয় পেলেও এখন কাজে যেতে আর বাধা নেই। তিনি বলেন, আমি এখন খুব খুশি। এখানে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছুই বদলায়নি তালিবান। দেশটিতে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণই বলে দিচ্ছে তালিবান আসলে তালিবানই রয়ে গেছে। সরকারে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ না থাকা; নারীদের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা দেয়া; নারী অধিকার ক্ষুণ্ন করা; বিক্ষোভে নারীদের মারধর স্পষ্ট করে দিচ্ছে তালিবানের নীতিকে। তবে এই পরিস্থিতিতে আফগান নারীদের এই সাহসী পদক্ষেপ দেশটিতে তাদের অবস্থান পরিবর্তনে বড়সড় ভূমিকা রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৫৫
আপনার মতামত জানানঃ