জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসস্থল হারানো, অতিরিক্ত মাছ ধরাসহ নানা কারণে হুমকির মুখে সামুদ্রিক প্রাণীর অস্তিত্ব। এর মধ্যে খুব শীঘ্রই পৃথিবী থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে হাঙর। সম্প্রতি এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার (আইসিইউএন)।
আইসিইউএন-এর তরফে একটি সমীক্ষা করে সবচেয়ে বিপন্ন সামুদ্রিক জীবের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে প্রথম স্থানেই রয়েছে হাঙর। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাঙরের ৩৭ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
এর পিছনে দুটো কারণ আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, হাঙরের যথেচ্ছ মাত্রায় শিকার এবং দ্বিতীয়টি হল জলবায়ুর পরিবর্তন এবং হাঙরের বিচরণ ক্ষেত্রের ক্রম সঙ্কোচন। শুধু হাঙর নয়, আইসিইউএন-এর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে কোমোডো ড্রাগনের নাম।
তবে আশার আলো এই যে, টুনা মাছ যে ভাবে বিপন্নের তালিকায় ঢুকে পড়েছিল, সেই তালিকা থেকে বেরিয়ে এসেছে। অতলান্তিক ব্লু ফিন টুনা বিপন্নের তালিকা থেকে সামান্য উদ্বেগজনকের তালিকায় ঢুকেছে। সাদার্ন ব্লু ফিন টুনা অতি বিপন্ন থেকে বিপন্নের তালিকায় এসেছে।
প্রকৃতির শোধ বড়ই নির্মম। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর প্রাণী ড্রাগন বিলুপ্ত হয়ে গেলেও রয়ে গেছে তার উত্তরসূরি কোমোডো ড্রাগন। কিন্তু আজ সেটিও বিলুপ্তির পথে।
শুধু কোমোডো ড্রাগন নয়, বিলুপ্ত হতে চলেছে সাগরতলের রাজা হাঙরও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, দীর্ঘ এক যুগের চেষ্টায় টুনা মাছ বিলুপ্তির পথ থেকে ফিরে আসলেও বিপন্ন হতে চলেছে হাঙর ও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সরীসৃপ কোমোডো ড্রাগন।
এসব সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও আবাসস্থল ধ্বংস হওয়াকেই দায়ী করছেন গবেষকরা।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সমুদ্রের জলস্তর বাড়তে থাকায় কোমোডো ড্রাগনের বাসস্থানের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যার জেরে আগামী ৪৫ বছরের মধ্যেই কোমোডো ড্রাগনের ৩০ শতাংশ বাসস্থান জলের নীচে চলে যাবে। যার ফলে এই ড্রাগনেরও অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে পড়বে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং গভীর সমুদ্রে বিভিন্ন খনির উপস্থিতিতে সামুদ্রিক প্রবাল, শামুক, মাছসহ অন্যান্য প্রাণীর জীবন কীভাবে প্রভাবিত হয় তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালিয়ে আসছে আইসিইউএন। ১৪ হাজার সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে প্রায় ২ শতাংশ এখন চিরতরে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে হুঁশিয়ার করেছে তারা।
আইসিইউএন-এর বিভিন্ন বিপন্ন প্রাণীর তালিকা আছে গঙ্গা হাঙরও (Ganges shark)। ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীতে পাওয়া যায় এই প্রজাতির হাঙর। এই প্রজাতির হাঙর খুব বিরল এবং সংখ্যায় যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ফলে আইসিইউএন-এর রেড তালিকার ২০টি হাঙরের মধ্যে রয়েছে বিপদগ্রস্থ এই হাঙর প্রজাতিও।
আইসিইউএন-এর আর এক গবেষণায় জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণের কারণে মহাসাগরগুলোতে অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মাছের অসংখ্য প্রজাতি।
বহু দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা জানতেন যে, মহাসাগরগুলোতে পুষ্টিমান কমে যাচ্ছে। এখন গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অক্সিজেন হ্রাস পরিস্থিতিকে মারাত্মক করে তুলছে, ফলে হুমকিতে পড়ছে হাঙর, টুনা, মার্লিনের মতো অনেক মাছ। কারণ বড় মাছগুলোর বেশি শক্তির দরকার হয়।
সূত্র মতে, সারা বিশ্ব জুড়ে সাতশোর বেশি সামুদ্রিক এলাকা এখন অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছে। ১৯৬০ এর দশকে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৫টি।
গ্রিনহাউজের কারণে যেহেতু কার্বন-ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার ফলে সমুদ্রগুলোকে আরো বেশি তাপ শুষে নিতে হচ্ছে। ফলে উষ্ণ পানি কম অক্সিজেন ধরে রাখতে পারছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ১৯৬০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে সমুদ্রের পানি থেকে ২ শতাংশ অক্সিজেন হারিয়ে গেছে। সারা বিশ্বের বিবেচনায় এটা খুব বেশি মনে নাও হতে পারে। কিন্তু কোন কোন গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় এই হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৩৫
আপনার মতামত জানানঃ