ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় যশোর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ হামলায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি গোলাম রেজা দুলুকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোর শহরের লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি দল অতর্কিতে তাদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম রেজা দুলুকে ছুরি মেরে চলে যায়। ওই সময় দলের আরেক নেতা দেলোয়ার হোসেন খোকনের বুকেও লাথি মারা হয়।
যশোর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু গণমাধ্যমকে বলেন, গত এক মাস ধরে বিএনপি কার্যালয়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের জন্যে নাম নিবন্ধনের কাজ চলছে। সকালে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে দলীয় চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা অফিসে থাকা কম্পিউটার, টেলিভিশন, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে এবং একটি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা অফিসের সামনে থাকা ১০টি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে ফেলে। ফেরার সময়ও তারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকে।
তিনি বলেন, আহত গোলাম রেজা দুলুকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাকে জরুরিভিত্তিতে রক্ত দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিএনপি নেতা গোলাম রেজা দুলুকে হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের ডাক্তার আহমেদ তারেক শামস জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে তার সুস্থতা কামনায় ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল শেষে দলীয় কার্যালয়ে করোনা রোগীদের জন্য গঠিত হেল্প সেলে টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন করতে সহায়তা কার্যক্রম চলছিল। হামলাকারীরা রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র তছনছ করে কম্পিউটার প্রিন্টার ও চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে এবং মারধর করতে থাকে। কার্যালয়ের সামনে রাখা নেতাকর্মীদের ১০-১২টি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রউফ পিন্টু জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রেজা দুলুর পায়ে ছুরি মারেন। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা হামলার জন্য জেলা ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল ইসলাম রানা বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাহউদ্দিন কবির পিয়াস, সাধারণ সম্পাদক তানজিল নওশাদ পল্লব, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রউফ পিন্টুর নেতৃত্বে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে হামলার খবর পেয়ে দলীয় কার্যালয় ও হাসপাতালে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। পরে তার নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
ঘটনার পরপরই যশোর কোতয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ রূপন বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এমন ঘটনা ঘটেছে কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে বেলা পৌনে ১১টার দিকে চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে নেতা–কর্মীদের। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি।
৮ থেকে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংঘর্ষের পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘটনাস্থলে যান। এরপর তিনিসহ নেতা-কর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীদের বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি ছিল। তবে পুলিশ বলছে, সেখানে এ কর্মসূচি পালনের জন্য বিএনপি অনুমতি নেয়নি।
বিএনপির ৪০ নেতা-কর্মী আটক
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪০ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এ তথ্য জানান পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকা থেকে ৪০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। যাচাই–বাছাই শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিক্ষোভের ডাক বিএনপির
রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের প্রতিবাদে বুধবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
তিনি বলেন, ‘বিনা প্ররোচনায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ, গুলি, টিয়ার শেল ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমরা প্রতিটি থানায় আগামীকাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল করব।’
এ সময় তিনি বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোকে বিক্ষোভে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
হামলার ঘটনায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সালাম বলেন, ‘আমরা এখনও আন্দোলন শুরু করিনি, সরকার আমাদের প্রতিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
এ সময় সরকারকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশের হামলার ঘটনায় আহতদের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে না পারলেও সালাম বলেন, ‘অসংখ্য আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণ তথ্য পাইনি।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৭
আপনার মতামত জানানঃ