বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া ৩৪ জন ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়েছিল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। সেই ৩৪ জন ব্যক্তির গুমের বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। একইসাথে জানিয়েছেন, দুনিয়ার কম বেশি সব দেশেই গুম হয়। আমরা তাদের বেশি পাত্তা দেই তাই তারা আমাদের অনবরত হ্যামার করে।
আজ শুক্রবার (১৩ আগস্ট) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান মন্ত্রী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটিকে জবাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুনিয়ার কম বেশি সব দেশেই গুম হয়। তবে তারা (জাতিসংঘ) ভারতকে কিছু বলে না। পাকিস্তানকে কিছু বলে না। আমরা তাদের বেশি পাত্তা দেই। তাই তারা আমাদের অনবরত হ্যামার করে।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৪ জন গুম হয়েছে। কই তারা তো এটা নিয়ে কিছুই বলে না। তবে আমাদের কাছে তারা যেটা জানতে চেয়েছে আমরা জবাব দেব।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠির সূত্র ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৪ জুন পুলিশের বিশেষ শাখা এসবিতে একটি চিঠি পাঠায়। ৩৪ জনের একটি তালিকা সংযুক্ত করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চাওয়াসহ চারটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়েছে এতে।
চিঠি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানোর পর তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা-এসবি (এসসিও-সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) হয়ে ওই চিঠি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে পাঠানো হয়।
এদিকে গুম হওয়া ৩৪ ব্যক্তির অবস্থান ও ভাগ্য জানতে চেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের চিঠি পাঠানোটা একটা বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা। যদিও তারা মনে করছেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে বা অবস্থান জানতে জাতিসংঘের চিঠি পাঠানোর প্রয়োজন ছিল না। গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। কিন্তু গুমের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে।
তারা বলেন, বিগত এক দশকে দেশ এমন অবস্থার সাক্ষী যেখান থেকে গণতন্ত্র ক্রমেই সরে গেছে। এমন এক শাসনব্যবস্থার সাক্ষী হয়েছে, যা গণতন্ত্রের যেকোনো রূপ থেকেই অনেক দূরে। ক্ষমতাসীনরা বলপ্রয়োগের ওপরেই আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। দেশ শাসনে এখন বলপ্রয়োগের বাহিনীগুলোই প্রাধান্য পাচ্ছে। বিগত দুই নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহির বিষয়টি অনেক দূরে চলে গেছে। যদিও এগুলোকে ‘নির্বাচন’ বলা যায় কি না, তাও একটি প্রশ্ন।
আরও বলেন, সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জবাবদিহির যে প্রক্রিয়া, তা যখন কার্যত অবসিত হয়েছে, তখন আরও বেশি দরকার হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জবাবদিহির চেষ্টা করা। কিন্তু, গুমের বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) কথা বলতে পারার ব্যর্থতার মাধ্যমেই জবাবদিহি না থাকায় তৈরি হওয়া সংকটের গভীরতা বোঝা যায়।
তারা বলেন, গুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার সময়ে এটা গুরুত্ব দেওয়া দরকার যে, গুমের বিষয়টি শাসনব্যবস্থা ও জবাবদিহির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত; আর এটা খুব স্পষ্টভাবে বলা যে, রাষ্ট্রকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৩
আপনার মতামত জানানঃ