পাকিস্তানে চায়ের দোকানে কর্মরত নাবালক ছেলেকে একটি চায়ের কেটলি চুরির অভিযোগে উত্তপ্ত কুড়াল চাটতে হয়েছে।
নাবালক ছেলেটির উপর কেটলি চুরির অভিযোগ আনলে সে বারবার অস্বীকার করে বলছিল যে, সে চুরি করেনি। এ সময় যারা তার ওপর অভিযোগ এনেছিলো তারা অমানবিক অত্যাচার শুরু করেন। নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে নাবালককে জিহ্বা দিয়ে উত্তপ্ত কুড়াল চেটে দেখাতে বলেন তারা। এর পর জোরপূর্বক নাবালককে দিয়ে তা করালে গরম কুড়ালে তার জিভ মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে। অমানবিক অত্যাচারের শিকার ওই কিশোরের নাম তেহসিব। সে গরিব রাখাল। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা ডন আরও জানিয়েছে, রাখাল বালকের ওপর এমন অমানবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগের সন্ধানে ছিল পুলিশ। পরে ওই তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের বর্ডার মিলিটারি পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তেহসিবের বাবা জান মোহাম্মদ।
কিশোরের বাবা জান মোহাম্মদ জানান, তার নির্যাতিত ছেলেকে তেহসিল সদর দপ্তরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মামলা করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের পুলিশ জানিয়েছে, তিন অভিযুক্তসহ ভুক্তভোগী নাবালক সবাই পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত বালোচের বাসিন্দা। তিন অভিযুক্তের নাম হলো – সিরাজ, আব্দুল করিম ও মোহাম্মদ খান।
ডনের খবর অনুযায়ী, বালোচে এখনও উপজাতিদের মধ্যে কিছু কিছু কট্টরপন্থি নিয়ম চালু আছে। যেখানে অপরাধীকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হয়। এমনকি পানিতে মাথা ডুবিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকতে না পারলে দোষী বলে চিহ্নিত করা হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে। রাখাল বালক তেহসিবকে এমনই এক ভয়ঙ্কর ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হলো
এদিকে একটি বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন গত বছর জানায়, পাকিস্তানে শিশু নির্যাতনের হার ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বেড়েছে ৪ শতাংশ।
ইসলামাবাদভিত্তিক শিশু সুরক্ষাবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা সাহিল ‘ক্রুয়েল নাম্বারস ২০২০’ শিরোনামের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পাকিস্তানে প্রতিদিন আটটি শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৫১ শতাংশ মেয়েশিশু এবং ৪৯ শতাংশ ছেলেশিশু।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে শিশু নির্যাতন চার শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে পাকিস্তানে কোনো না কোনোভাবে প্রতিদিন আট শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানে নির্যাতনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের বয়স ছয় থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া এক বছরের কম বয়সী থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২৪৪
আপনার মতামত জানানঃ