আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়ার নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গারা। এতে এপিবিএনের ১২ সদস্য আহত হয়েছেন। আজ রোববার (১ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছে কক্সবাজার ১৬ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি তারিকুল ইসলাম। পরে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
সূত্র মতে, কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের মধ্যে রেশন কার্ড নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। গত এক মাস ধরে রেশন নিতেও আসেনি তারা। এরপর তারা আজ রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পে বিক্ষোভ শুরু করে।
দুপুরে বিভিন্ন ব্লকে চলমান বিক্ষোভ ঠেকাতে রোহিঙ্গাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। কিন্তু উল্টো রোহিঙ্গারা এপিবিএন সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে।
জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে জাতিসংঘের ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বা ডব্লিউএফপি) তাদের খাদ্যসহায়তা দিয়ে আসছে। এ জন্য ডব্লিউএফপির কর্মকর্তারা আলাদা করে তালিকা করেন নিবন্ধিতদের।
কিন্তু চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে পুরোনো রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তার কার্ড নিয়ে নেয় সংস্থাটি। ২০১৭ সালে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তাদের সংযুক্ত করে আবার কার্ড বিতরণ করা হয়। কিন্তু সে কার্ড নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এক মাস ধরে রেশন নিচ্ছে না পুরোনো রোহিঙ্গারা।
আগে আসা রোহিঙ্গাদের দাবি, পুরোনো ও নবাগতদের একই ফুড কার্ড দিয়ে তাদের মর্যাদা সমান করে দেয়া হয়েছে, যা তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তবে সমতা রক্ষায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) এবং জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) কর্তৃপক্ষও তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ক্যাম্পে আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। এ বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের মধ্যে আজ রোববার তর্কাতর্কির পর সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার ১৬ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি তারিকুল ইসলাম বলেন, বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে গেলে এপিবিএনের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের ১২ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মূলত এসব রোহিঙ্গারা ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে। তারপর তাদের শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধন করে সরকার। এরপর নানা ভাবে তাদের সহযোগীতা দিত বিভিন্ন সংস্থা বা সরকার।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে অন্তত ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে। তাদের মধ্যে কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা নিবন্ধিত।
দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের এসব নাগরিক কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অর্থ লেনদেন ও ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। অনেকেই অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছে। প্রশাসনের অগোচরে ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের কমিটি করছেন রোহিঙ্গারা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে প্রতিনয়ত। ক্রমশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮২৫
আপনার মতামত জানানঃ