ধর্ষণ আর নারী নির্যাতন আমাদের সামাজিক কালচার হয়ে উঠেছে। নারীঘটিত যেকোনো ব্যক্তিগত ক্ষোভে, বিবাদে, হীনমন্যতায় এ দেশে ধর্ষণ এবং নির্যাতনকে বেছে নেয়া হয়। ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করা হচ্ছে সংঘবদ্ধভাবে; যেখানে ভুক্তভোগীরা শিশু। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের পেকুয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ৮ম শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রী। এরপর অপমান সহ্য করতে না পেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি আত্মহত্যার মামলা নিলেও, ধর্ষণের মামলা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ওই ছাত্রী শুক্রবার (২৩ জুলাই) রাতে তিন বখাটে কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে অপমান সইতে না পেরে শনিবার ভোরে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে বিষপান করে আত্মহত্যা করে।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরী উক্ত এলাকার আইয়ুব আলীর মেয়ে। রাজাখালী বহুমুখী বেশারাতুল উলুম ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী। পুলিশ শনিবার তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনায় নিহত মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের মকসুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম, রাজাখালী ইউনিয়নের হাজী পাড়ার মৃত বাদশার ছেলে আলমগীর ও নুরুল হকের ছেলে রবি আলমকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।
মাদ্রাসাছাত্রীর বাবা বলেন, ঘটনার সময় আমি ও আমার স্ত্রী বাঁশখালীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। রাতে ছেলে ফোন দিয়ে বলে, আমার মেয়ে বিষপান করেছে।
দ্রুত বাড়িতে এসে স্থানীয়দের থেকে জানতে পারি মৃত বাদশার ছেলে আলমগীর, নুরুল হকের ছেলে রবি আলম ও বাঁশখালী ছনুয়া এলাকার মকসুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম আমার মেয়েকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে মৎস্য প্রজেক্টের টংঘরে নিয়ে যায়। ওখানে তিন জন মিলে তাকে ধর্ষণ করে।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এমন ঘটনায় আমার মেয়ে অপমানবোধ করায় রাতে বিষপান করে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
তিনি দাবি করে বলেন, একই এলাকার মৃত বাদশার ছেলে আলমগীর, নুরুল হকের ছেলে রবি আলম ও বাঁশখালী ছনুয়া এলাকার মকসুদ আহমদের ছেলে আবুল কাশেম মিলে তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় তার মেয়েকে হয়রানি করতো বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রীর বাবা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নেজাম উদ্দিন নেজু জানান, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি নিহত ছাত্রীকে মাদ্রাসায় আসা যাওয়ার পথে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো বাঁশখালীর ছনুয়া এলাকার আবুল কাশেম নামে এক বখাটে।
সর্বশেষ রাতে ওই বখাটেসহ তার আত্মীয় আলমগীর ও রবি আলম ছাত্রীকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ছাত্রী অপমান সইতে না পেরে রাতে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে জেনেছি।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিষয়ে জানানো হলেও এ ঘটনায় পেকুয়া থানায় অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, মেয়েটি বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে খবর পেয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মেয়েটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রতিবেদনে যদি অন্য কোনো কারণ থাকে, তাহলে পরে সেই ধারায় মামলা নেওয়া হবে এবং এরপর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির মধ্যেও ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ থেমে নেই। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেও সামাজিক কালচার হয়ে ওঠা এই অপরাধ থেকে দূর্বৃত্তদের সরানো যাচ্ছে না। গত বছর ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে দেশে এক হাজার ৩৪৬ জন নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরে মোট ৩ হাজার ৪৪০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের ৩৫ শতাংশই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি, দেশের থানাগুলোয় গত পাঁচ বছরে ২৬ হাজার ৬৯৫টি ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৫৪২
আপনার মতামত জানানঃ