পৃথিবীব্যাপি প্রকৃতি তার তাণ্ডব রূপ দেখাচ্ছে। কোথাও তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছে বন, কোথায় অতিবৃষ্টিতে ভূমিধ্বস হচ্ছে শহরজুড়ে। গত দুই সপ্তাহের ভেতরে অতিবৃষ্টি থেকে বন্যার সৃষ্টি হয়ে জার্মান, বেলজিয়াম, চীন পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। এবার ভারত পড়লো বন্যার কবলে। ভারতের মহারাষ্ট্র ও মুম্বাইয়ে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ভূমিধ্বস ও বন্যায় ১৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি চাঁদের প্রভাবে ২০৩০ সালে পৃথিবীতে ‘রেকর্ড ফ্লাডিং’ অর্থাৎ ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। রেকর্ড ফ্লাডিং বলতে সেই বন্যা পরিস্থিতিকে বোঝায়, যা কার্যত এতদিন দেখা যায়নি। এই বন্যার প্রভাব যথেষ্ট বিধ্বংসী হতে পারে।
ভারী বৃষ্টিপাতের থেকে সৃষ্ট ভূমিধস ও বন্যায় এখন অব্দি জার্মানিতে ১৫৭ জন, বেলজিয়ামে ৩৭ জন, চীনে ৫১ জন ও ভারতে ১৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত ও নিঁখোজ নিয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য নেই।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, ‘ভারী বৃষ্টির কারণে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভূমিধ্বস হয়েছে এবং নদীতীরবর্তী অনেক এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বাঁধ ও নদীর পানি উপচে পড়ছে। নদীতীরের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নৌ ও সেনাবাহিনী উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার তৎপরতায় সাহায্য করছে।’
এদিকে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের ১১৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা তালিয়ে ও ভূমিধ্বসে অন্তত ৩৮ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার রাজ্য সরকার।
মহারাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চলে ৯টি ভূমিধ্বসে ৫৯ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টির কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৫ জনের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাতারা ও রায়গড় জেলার অসংখ্য মানুষ ভূমিধ্বসের কবলে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সাতারা, রায়গড় ও রত্নগিরির বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ভারী বৃষ্টি ও বন্যার কারণে উদ্ধারকাজের জন্য যন্ত্রপাতি ঠিকমতো নেওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে ভারী বর্ষণের কারণে ভারতের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইসহ রাজ্যের একাধিক জেলায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ এই রেড অ্যালার্ট জারি করে। এ সময় মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাইয়ের পাশাপাশি রাজ্যের থানে ও পালঘর জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া বিভাগ।
গত বুধবার(২১ জুলাই) সকাল থেকেই মুম্বাই, থানে, পালঘর, রায়গড় জেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। রাতের দিকে হয় বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতও হয়। এ অবস্থায় ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
বৃষ্টির কারণে ২০ জুলাই মুম্বাইয়ে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি ছিল। ২১ জুলাই অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করা হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার প্রবল বৃষ্টি হবে জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ মুম্বাইসহ কয়েকটি এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে।
করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতকে এখন বৃষ্টি, বন্যা, ভূমিধসের দুর্যোগও সামাল দিতে হচ্ছে। তবে শুধু ভারত নয় প্রকৃতির রোষানলে যেন গোটা পৃথিবীই। বাদ নেই বাংলাদেশও। দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতিমধ্যেই বন্যার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজের ৬৫ কিলোমিটার উজানে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের সবগুলো ‘জলকপাট’ খুলে দেওয়ায় ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়ে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। নদী পাড়ের গ্রামগুলো ডুবে গেছে। বন্যার পানিতে ৫১৬ কিলোমিটার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পাশাপাশি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। উত্তর–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার কাছাকাছি এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়।
দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ