তালিবানের দখলদারিত্বে অনেকদিন ধরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী হয়ে আছে আফগানিস্তানে। বারবার মোড় বদলে যাচ্ছে অঞ্চলটির ভূ-রাজনীতির। তবে পাল্লাটা ভারী হয়ে আছে তালিবানদের দিকেই। তবে সেনা সরিয়ে নেয়া শেষ হতে না হতেই আফগামিস্তানে তালিবানদের অবস্থান লক্ষ্য করে মার্কিন বিমান হামলা চালানোর ঘটনায় এবার কিছু স্বস্তিকর অবস্থানে আফগান সরকার।
পেন্টাগন স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার এ হামলার কথা জানিয়েছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর বরাত দিয়ে জানান, ‘গত কয়েক দিনে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে আমরা বিমান হামলা চালিয়েছি।’ তবে কিরবি এই বিমান হামলা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে এ রকম হামলা চলবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি সেন্ট্রাল কমান্ড জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি এ হামলার বৈধতা দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় গত বুধবার(২১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ও আফগান সরকারকে সহযোগিতা দেবে।
একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে বলেন, তালিবান জঙ্গিরা আফগানিস্তানের চার শতাধিক এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে তালিবানরা আফগানিস্তানের জনবহুল প্রধান শহরগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, এখনও আফগানিস্তানের কোনও বড় প্রদেশ নাকি তালিবানদের দখলে যায়নি৷ কাবুল-সহ সে দেশের বড় শহরগুলি এখনও আফগান সেনাদের দখলেই রয়েছে৷ মিলের মতে শুধু সৈন্য আর বন্দুকের সংখ্যা দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। জয়ের জন্য যেটা সব চেয়ে দরকার, তা হল মনোবল। সেটা আফগান বাহিনীর ভালমতোই রয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছে বাইডেন প্রশাসন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে অবস্থান করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই হাজার সেনা ও ১৬ হাজার বেসরকারি ঠিকাদার। এ হিসাবের বাইরেও দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত বাহিনীর প্রায় এক হাজার সেনা মোতায়েন ছিলে।
আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও সময় বাকি থাকতেই বেশিরভাগ কাজ সেরে ফেলেছে বাইডেন তারা। এর মধ্যেই এ হামলার ঘটনা ঘটল।
আগামী ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শেষ হবে। এ পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার শুরুর পর থেকেই তালিবান দেশটির বিভিন্ন এলাকা দখলে নেওয়া শুরু করে। এর পর দখলে নিয়েছে বেশ কয়েকটি স্থলবন্দর। বিভিন্ন শহর দখলে নেওয়ার জন্য লড়ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে।
এর মাঝেই সম্প্রতি দেশটির বাণিজ্য পরিচালনা করা হয় এমন ৯০ শতাংশ সীমান্ত দখলে নেওয়ার দাবি করেছে তালিবান। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি করেন তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ।
মুজাহিদ বলেন, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং ইরানের সঙ্গে সীমান্ত এলাকাসহ ৯০ শতাংশ সীমান্ত আমাদের দখলে রয়েছে।
এর আগে তালিবানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা তালিবানের দখলে রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ