সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন এমন চিত্র বাংলাদেশে ডালভাত। কারও কারও ক্ষেত্রে এই টাকার পরিমান এত বেশি যে কয়েক কোটি অব্দি পৌছায়। যেই পরিমান টাকাই আত্মসাৎ করা হোক, সেটায় কারও না কারও হক নষ্ট হয়েই পৌছাচ্ছে আত্মসাৎকারীর পকেট অব্দি। এসব দুর্নীতির কবলে পড়েই অবস্থান পরিবর্তন হচ্ছে না নিম্নস্তরে কাজ করা কর্মজীবিদের।
এভাবেই ২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) ব্যবস্থাপকের নামে। অভিযোগ উঠলে বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল সোমবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল গ্রেপ্তার করেছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফ সাদেক গনমাধ্যমকে আবুল কাশেমের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে দুদক। ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, এসবিসির প্রধান কার্যালয়ে অডিট অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে একটি চক্র ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খুলে এসবিসির আয় থেকে ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এসবিসির গত বছরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে আসে। এরপর দুদক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে মামলা করে।
২০০৯-১০ সময়ে আবুল কাশেম ছিলেন এসবিসির ঢাকার নিউমার্কেট শাখার ব্যবস্থাপক। তখন থেকেই তিনি জালিয়াতি শুরু করেন। এরপর ১০ বছর ৬ মাস ধরে চলে এ জালিয়াতি। এসবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯-১০ সময়ে আবুল কাশেম ছিলেন এসবিসির ঢাকার নিউমার্কেট শাখার ব্যবস্থাপক। তখন থেকেই তিনি জালিয়াতি শুরু করেন। এরপর ১০ বছর ৬ মাস ধরে চলে এ জালিয়াতি। তবে এসবিসি প্রধান কার্যালয় জালিয়াতির বিষয়টি টের পায়নি বলে সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা দাবি করেন।
আবুল কাশেম ২০১০ সালে এসবিসির নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। এসবিসির অনুমোদন ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে ওই ব্যাংক হিসাব খোলেন তিনি। হিসাবটিতে এযাবৎ জমা হয় ২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
গত বছর এসবিসির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খসরু দস্তগীর আলমের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, আবুল কাশেম ২০১০ সালে এসবিসির নামে বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব খোলেন। এসবিসির অনুমোদন ছাড়া অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে ওই ব্যাংক হিসাব খোলেন তিনি। হিসাবটিতে এযাবৎ জমা হয় ২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
আত্মসাৎ করা টাকা ছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিভিন্ন প্রকল্পের প্রিমিয়ামের টাকা। এসবিসির সঙ্গে নৌবিমা করার অংশ হিসেবে প্রকল্পগুলো থেকে এ আয় আসে।
আবুল কাশেমের দীর্ঘ ১০ বছরের জালিয়াতির চিত্র তদন্তে উঠে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে কাজ করে দুদক এবং মামলা করে। সেই মামলার আসামি হিসেবেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আবুল কাশেম। তিনি ছাড়া আর কে কে এই জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত, তা নিশ্চিত করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, বিউবো ও বিসিএসআইআরসহ বুয়েটের একাধিক কর্মকর্তা এই জালিয়াতিতে জড়িত।
জানতে চাইলে এসবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আবুল কাশেমের দীর্ঘ ১০ বছরের জালিয়াতির চিত্র আমাদের নিজস্ব তদন্তে উঠে আসে। এরপর বিষয়টি নিয়ে কাজ করে দুদক এবং মামলা করে। সেই মামলার আসামি হিসেবেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আবুল কাশেম। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিজেএ/১২০৫
আপনার মতামত জানানঃ