জামিন পাওয়ার পর কারাগারের সীমানা থেকে কোনা আসামিকে গ্রেপ্তারের কোনো নিয়ম নেই। তবুও মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার ত্যাগ করার মুহূর্তেই অটোরিকশাচালক হাফিজ ভূঁইয়াকে (২৫) তুলে নিয়ে দুই দিন পর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। সূত্র মতে, ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার ত্যাগ করার মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটে। টাকা না দেওয়ায় ওই অটোরিকশাচালককে পুলিশ জামিনে বের হতে দেয়নি বলে ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ করেছে। এজন্য ভুক্তভোগীর পরিবার মামলার আবেদন করেছে বলে জানা যায়। অটোরিকশাচালক হাফিজ সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের দুর্বাজ মিয়ার ছেলে।
যা ঘটেছে মূলত
এ ঘটনায় হাফিজের মা রেজিয়া বেগম জেল সুপার, সদর থানার পরিদর্শকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা বেগমের আদালতে এ মামলার আবেদন করা হয়।
আদালতে দায়ের করা ওই মামলার আবেদনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার ইকবাল হোসেন, জেলার দিদারুল আলম ও ডেপুটি জেলার রেজাউল করিম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপারেশন) সোহরাব আল হোসাইন, উপপরিদর্শক এসআই মো. বাবুল ও সুজন কুমার চক্রবর্তীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী নিজাম উদ্দিন খান বলেন, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন। ঈদের ছুটির পর যেদিন আদালত খোলা হবে, সেদিন এই মামলার আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা বেগম জানিয়েছেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়, সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সোহরাব আল হোসাইন, এসআই মো. বাবুল ও সুজন কুমার চক্রবর্তী জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারের সঙ্গে যোগসাজশে ১৬ জুলাই দুপুরে কারাগারের প্রধান ফটকের ভেতর থেকে একটি লাল রঙের পিকআপে হাফিজকে তুলে সদর থানায় নিয়ে যান।
অটোরিকশাচালক হাফিজের পরিবার ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ জুন দিবাগত রাতে একটি ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের মধ্যপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে হাফিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই মামলায় ১৫ জুলাই সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আয়েশা বেগম হাফিজকে জামিন দেন।
ওই দিনই হাফিজের জামিনসংক্রান্ত সব নথি জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু স্বজনেরা ওই দিন রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কারাগার থেকে হাফিজকে বের করতে পারেননি।
সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সোহরাব আল হোসাইন, এসআই মো. বাবুল ও সুজন কুমার চক্রবর্তী জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারের সঙ্গে যোগসাজশে ১৬ জুলাই দুপুরে কারাগারের প্রধান ফটকের ভেতর থেকে একটি লাল রঙের পিকআপে হাফিজকে তুলে সদর থানায় নিয়ে যান।
হাফিজের পরিবার অভিযোগ করেন, এর আগে পুলিশ পরিদর্শক সোহরাব আল হোসাইন হাফিজের মা রেজিয়া বেগম ও ভগ্নিপতি মন মিয়ার কাছে ৫০ হাজার টাকা চান।
সোহরাব আল হোসাইন একপর্যায়ে হাফিজকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখান। পরে মন মিয়া সঙ্গে সঙ্গে সোহরাবকে পাঁচ হাজার টাকা দেন। পরে পুলিশ পরিদর্শক সোহরাব, এসআই মো. বাবুল ও সুজন কুমার হাফিজের মা ও মন মিয়াকে রাতের মধ্যেই বাকি টাকা দিতে বলেন।
টাকা না দিলে ডাকাতিসহ গুরুতর মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেন। বাকি টাকা দিতে না পারায় হাফিজকে গত ১৬ জুনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৭ জুলাই আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠান এসআই সুজন কুমার চক্রবর্তী।
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
হাফিজের ভগ্নিপতি মন মিয়া বলেন, ১৬ জুলাই দুপুরে লাল রঙের একটি পিকআপ জেল খানার গেটে ঢোকে। হাফিজ বের হলেই ভেতর থেকেই তাকে পিকআপে তুলে থানায় নিয়ে যান পরিদর্শক সোহরাব, এসআই বাবুল ও সুজন।
হাফিজের মা রেজিয়া বেগম বলেন, ‘টাকা না দেওয়ায় হাফিজকে তাঁরা কারাগার থেইক্যা তুইল্যা নিয়া নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখাইছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সোহরাব আল হোসাইন।বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ, এ বিষয়টি আমার জানাই নেই।’
এজাহারের আসামিকে কারাগারের প্রধান ফটকের ভেতর থেকে গ্রেপ্তারের বিষয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি কিছু জানেন না। তিনি কারাগারেই যাননি। বিষয়টি জেনে জানাবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, কারাগারে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিনিয়তই পুলিশ আসে। অনেককে রিমান্ডের জন্য নিয়ে যায়। আবার অনেককে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রধান ফটক পর্যন্ত কারাগারের সীমানা। জামিন পাওয়ার পর কারাগারের সীমানা থেকে কোনা আসামিকে গ্রেপ্তারের কোনো নিয়ম নেই। প্রধান ফটক অতিক্রম করলে পুলিশ মামলা সাপেক্ষে যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
তিনি আরওব লেন, কারাগারের সীমানার ভেতর থেকে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছেন, এমন তথ্য আমার জানা নেই। এমনটি হওয়ার কথা নয়। আর আমাদের বিরুদ্ধে মামলার বাদীর তো কোনো অভিযোগ থাকার কথা না।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ