বিদ্যুৎ বিভাগের কাণ্ডজ্ঞানহীনিতার শেষ নেই। এবার বৈদ্যুতিক খুঁটির বদলে ফলজ গাছে বিদ্যুৎ সংযোগের তার সরবরাহ করেছে তারা। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। আতঙ্কে আছে পথচারী ও এলাকাবাসী।
এই ঘটনা ঘটেছে রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নে। সংলগ্ন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্র মতে, লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য রাঙ্গাউদা মেম্বারের পাড়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের নিজস্ব খুঁটি ব্যবহার না করে একটি ফলজ গাছের সঙ্গে প্রধান লাইন টানিয়েছে।
একটি তারে কভার থাকলেও অন্য তারের কোনো কভার নেই। যেকোনো সময় দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানি ঘটে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় অধিবাসীরা।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা তপন চাকমা জানান, এমনিতে এই গ্রামে ২৫ পরিবার বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে না। যারা পাচ্ছেন তারাও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কাঁচা গাছের সঙ্গে বিদ্যুৎ লাইন টেনে কীভাবে এ কাজটি করতে পারলেন। ঝড়-বাতাসে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রাঙ্গাউদা চাকমা জানান, ৭ থেকে ৮ বছর আগে যখন এ গ্রামে বিদ্যুৎ আসে তখন ওইখানে লাইনের সংযোগ দিয়েছিল। স্থানীয়দের প্রশ্নের জবাবে জনৈক আলম নামের ঠিকাদার ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে বাকি খুঁটিগুলো চলে আসবে বলে আপাতত এই গাছের সঙ্গে লাইন দিচ্ছি বলে জানিয়েছিলেন।
কিন্তু তখন থেকে এ পর্যন্ত এখনো কোনো সমাধান হয়নি। যেকোনো সময় সম্পূর্ণ এলাকায় মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি এ বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনে অনেকবার আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিভাগের দীঘিনালা উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (আবাসিক) সাগর দেব নাথ বলেন, কীভাবে এরকম কাজ হলো জানিনা। তবে বিষয়টি শুনেছি, আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তবে এমন অভিযোগ নতুন নয়। সম্প্রতি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মেইন তারে বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার না করে একটি শিমুল গাছকে বৈদ্যুতিক খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা ঘটনা ঘটে। এ সময় দুর্ঘটনা এড়াতে মেইন তারে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ইট। এতে দুর্ঘটনায় আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে এলাকাবাসী।
ঝুঁকিযুক্ত এমন বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের একটি গ্রামেও। সেখানে গাছের ডাল কেটে বানানো হয়েছিল বিদ্যুতের খুঁটি। সারিবদ্ধ বাঁশ দিয়ে ছড়ানো হয়েছিল সঞ্চালন লাইন। ঝুঁকিযুক্ত এসব খুঁটি থেকে বাড়িতে নেয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। বাঁশের খুঁটিতে সরবারহ করা সঞ্চালন লাইনগুলোর অবস্থা ছিল নাজুক। ঘটেছে অনেক দুর্ঘটনা।
এমনকি ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌর শহরসহ বিভিন্ন এলাকা শিলাসী, রাঘাইচটি, ষোলহাসিয়া, চরসালটিয়া, তেতুলিয়া, পুখুরিয়া, হাটুরিয়া, উথুরি ও আমাটিয়া গ্রামে কাঁচা গাছ ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিপদজনকভাবে পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এতে মূল্যবান ট্রান্সফরমারসহ বিদ্যুৎ সরবরাহের তার ওভারলোডেড হয়ে পুড়ে যায়।
জানা যায়, ওই পৌর শহরেও বেশির ভাগ এলাকায় মূল খুঁটি (পিলার) থেকে গাছ ও বাঁশের সাহায্যে বিদ্যুতের তার টেনে তা শতশত বাসা-বাড়ি, গভীর নলকূপ এবং সেচ পাম্পে সংযোগ দেয়া হয়।
এছাড়া, চট্টগ্রামের পটিয়া কোলাগাঁও ইউনিয়নের লাখেরা পশ্চিম চাপোড়া গ্রামেও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে বৈদ্যুতিক খুঁটির বদলে ব্যবহার করা হয় সড়কের পাশে ছোট মাদার গাছ অথবা মেহগনি গাছ। কোথাও আবার আরসিসি পিলার ব্যবহার করা হয়।
এভাবে ১০ বছর ধরে চলে ওই গ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পিডিবির বিদ্যুৎসেবা। ইতোমধ্যে ওই গ্রামের অর্ধশত ছোটখাটো বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটে।
এভাবেই যেন সারা দেশে বৈদ্যুতিক খুঁটি ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহের মিশনে নেমেছে পিডিবি। তাদের এই নির্মম রসিকতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষ। বারবার ঘটলেও প্রতিকারের ব্যবস্থা নেই; ভুল শুধরানোর দায়বদ্ধতা নেই। এমনই জবাবদিহিতাহীন বাংলাদেশে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১৪০
আপনার মতামত জানানঃ