যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ শতাংশ ইহুদি মনে করেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণ আমেরিকার বর্ণবাদের মতই। মঙ্গলবার একটি জরিপের ফলের ওপর ভিত্তি করে এ তথ্য জানায় লন্ডনভিত্তিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আই। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর এ জরিপ চালানো হয়।
জিউশ ইলেকটোরেট ইনস্টিটিউট ২৮ জুন থেকে ১ জুলাইয়ের মধ্যে এ জরিপ চালিয়েছে, যা প্রকাশ করেছে ১৩ জুলাই। জরিপে অংশ নিয়েছেন ৮শ জন।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৩৪ শতাংশ ইহুদি মনে করেন ‘ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের আচরণ আমেরিকায় চলা বর্ণবাদের মতোই’।
জরিপে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ ইহুদির চোখে ইসরায়েল একটি ‘বর্ণবাদী রাষ্ট্র’। এ ছাড়া ২২ শতাংশ মনে করেন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরাইয়েলি গবেষণা সংস্থা, ‘ক্যান্টোর সেন্টার’ এর এক রিপোর্টে জানায়,করোনা মহামারী চলাকালে, বিশ্বজুড়ে ইহুদি বিরোধী সহিংসতার মাত্রা কমে গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়I গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি বিরোধী ১১৯টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছেI
ইসরায়েলের পরেই বৃহত্তর এক ইহুদি জনগোষ্ঠীর বসবাস এই যুক্তরাষ্ট্রেI এখানে ৪০ লক্ষ ২০ হাজার ইহুদি আমেরিকান জনগণ বসবাস করছেন, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সহিংসতা বৃদ্ধির কারণে তাদেরকে ভয়-ভীতির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছেI
এদিকে নভেম্বর, ২০১৯ থেকে জুন, ২০২০ অব্দি সময়জুড়ে পিউ রিসার্চ সেন্টারের দ্বারা করা এক সমীক্ষায় জানা যায়, ৪৫% আমেরিকান ইহুদিরা নিজেদের অস্তিত্বের জন্য ইসরায়েলকে প্রয়োজনীয় মনে করেন এবং ৩৭% ইহুদি ইসরায়েলকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবলেও প্রয়োজনীয় মনে করেন না। এদিকে, ১৬% ইহুদি তাদের পরিচয়ের জন্য ইসরায়েলকে গুরুত্বপূর্ণই মনে করেন না।
সম্প্রতি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি ইহুদিদের অব্যাহত সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার ইহুদিরা ইসরায়েলকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ ইহুদির চোখে ইসরায়েল একটি ‘বর্ণবাদী রাষ্ট্র’। এ ছাড়া ২২ শতাংশ মনে করেন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ব্রুকলিনভিত্তিক কট্টরপন্থি ইহুদিদের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এএমআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আমেরিকান ইহুদিদের তীব্র সমালোচনা করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের পরও যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিদের বড় একটি অংশ তাকে ভোট দেননি।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমেরিকান ইহুদিরা ইসরায়েলকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসেন না। আপনি কি জানেন আমাকে সবচেয়ে বেশি কোন বিষয়টি অবাক করে? আমি গোলান মালভূমি, জেরুজালেমে ইসরায়েলের কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দিয়েছি। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভণ্ডুল করে দিয়েছি।
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিটি নিশ্চয়ই ছিল বড় ধরনের বিপর্যয়, তাই নয় কি? এ ছাড়া অনেক কিছু করেছি। তবু ইহুদিরা তাকে সেভাবে ভোট না দেওয়ায় অবাক হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস— আমি মনে হয় মাত্র ২৫ শতাংশ ইহুদির ভোট পেয়েছি। এটা কোনো কথা?
এদিকে হোয়াইট হাউসে লিয়াজোঁ কর্মকর্তা এবং ইহুদি বিদ্বেষ বিষয়ে তদারকি ও প্রতিরোধের জন্য দূত না থাকার কারণে নাখোশ যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা। তবে শিগগির এ দুটি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে বাইডেন প্রশাসন ঘনিষ্ঠদের সূত্রে।
সম্প্রতি বিভিন্ন ঘটনার উদাহরণ দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে ইহুদি বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। এমন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি পদে প্রতিনিধি না থাকাটা বেশ বেমানান লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিদের কাছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের ইসরায়েল সফর নিয়ে ৪ জুন আয়োজিত ব্রিফিংয়ে। সেখানে ইহুদি সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের অনুপস্থিতি ভাবনার মধ্যে ফেলে দেয় যুক্তরাষ্ট্রকে।
এ ধরনের ব্রিফিংয়ে সাধারণ ইহুদিদের বিভিন্ন গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কিন্তু সেদিন ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান গ্রুপগুলোর প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং ইহুদি নারীদের প্রভাবশালী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনুপস্থিত ছিলেন, যা অবাক করার মতো ঘটনা। এতে স্পষ্ট যে, বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।
দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের বিবেচনা আপাতত নেই: ইসরায়েল
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাত নিরসনে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য তাগাদা দিয়ে থাকে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো।তবে গত সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ফরেন অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিড বলেন, ফিলিস্তিনকে ঘিরে সংকট নিরসনে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পরিকল্পনা আপাতত নেই।
ইয়ার লাপিড বলেন, ‘এটা সবাই জানেন, আমি দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সমর্থন করি। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এ জন্য কোনো পরিকল্পনা আপাতত আমাদের হাতে নেই। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সেটিকে অবশ্যই শান্তিপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক হতে হবে। আমরা কোনোভাবেই ইসরায়েলিদের জীবনের জন্য নতুন করে কোনো হুমকি তৈরির অংশ হতে পারি না।’
ইসরায়েল আরব বিশ্বে নতুন ধরনের শান্তি প্রতক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে বলে এ সময় মন্তব্য করেন লাপিড। তিনি বলেন, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে দূতাবাস খুলেছে ইসরায়েল। শিগগিরই মরক্কো, বাহরাইন ও সুদানে দূতাবাস খোলার আশা করা হচ্ছে। এ সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জীবনমান উন্নয়নে মানবিক সহায়তা প্রদানসহ সম্ভাব্য যা করার, আমরা করব।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৮
আপনার মতামত জানানঃ