কিউবার কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজধানী হাভানাসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ করছে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক। বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং করোনা মহামারি মোকাবিলায় ভ্যাকসিনের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
কমিউনিস্ট শাসিত দ্বীপরাষ্ট্র কিউবায় কয়েক দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। রোববার(১১ জুলাই) রাজধানী হাভানা ও সান্তিয়াগোসহ বেশ কয়েকটি শহরে অসংখ্য মানুষ ‘স্বাধীনতা’ বলে শ্লোগান দেয় ও প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ কানেলের পদত্যাগ দাবি করে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সাবেক মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে কিউবা। এর মধ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটেছে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সঙ্কট, নাগরিক স্বাধীনতার সঙ্কোচন এবং মহামারী মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ লোকজন প্রতিবাদে নামে।
হাভানার কেন্দ্রস্থলে ও সমুদ্রতীরবর্তী সড়কে কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে ‘দিয়াজ কানেল সরে যাও’ বলে শ্লোগান দেয়। এ সময় সরকারের সমর্থকরাও কিউবার পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে আসে আর ‘ফিদেল’, ‘ফিদেল’ বলে শ্লোগান দেয়।
এ সময় রাজধানী হাভানাজুড়ে পেছনে মেশিনগান বসানো স্পেশাল ফোর্সের জিপগুলোকে টহল দিতে দেখা যায়। প্রতিবাদকারীরা বাসায় চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত নগরীটিতে অনেক পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড় হলে সেখানে প্রচুর সামরিক ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এদিকে হাভানা থেকে ৩০ মাইল দূরের এন্তোনিও ডি লস বানোস শহরে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। এদের অধিকাংশই তরুণ।
রোববার বিকালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে কিউবার প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান দিয়াজ কানেল এই অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে কিউবার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা আরও কঠোর করেছে।
দিয়াজ কানেল বলেন, প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অনেকেই আন্তরিক ছিলেন কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণায় এবং মাঠে থাকা ‘ভাড়াটে ব্যক্তিদের’ দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন। এরপর আর ‘উস্কানি’ দেওয়া হলে তা সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করে সমর্থকদের এসব ‘উস্কানিদাতাদের’ প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম গোলার্ধ সম্পর্কিত ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি চাং বলেন, “কিউবায় লড়াইয়ের ডাক গভীর উদ্বেগজনক। কিউবান জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারের পক্ষে আছি আমরা।”
কমিউনিস্ট শাসিত কিউবায় যে কোনও বিক্ষোভই বিরল ঘটনা। আর এবারের বিক্ষোভটি হয়েছে দেশটিতে রেকর্ড পরিমাণ করোনা সংক্রমণের সময়।
গত ৩০ বছরের মধ্যে এটাই কিউবায় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। দেশটিতে রোববার সন্ধ্যা থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যা ২০১৮ সালে চালু হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৯১৬
আপনার মতামত জানানঃ