টিকা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসলো। করোনা ভাইরাসের অত্যন্ত ছোঁয়াচে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কি করোনা টিকাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম? গোটা বিশ্বজুড়ে টিকাদান কর্মসূচির মধ্যে এই প্রশ্নটি বার বার উঠে আসছে৷ এই প্রশ্নকে এবার দুশ্চিন্তায় বদলে দিল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ শুক্রবার প্রকাশিত একটি গবেষণা।
তবে এর আগে সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি গবেষণাকে ঘিরেও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছিল৷ ওই গবেষণায় দেখা যায়, ফাইজার-বায়োনটেকের মতো কার্যকর করোনা টিকার দুটি ডোজ পাওয়া সত্ত্বেও সে দেশে কিছু মানুষ ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গবেষণার ফল অনুযায়ী ডেল্টার মোকাবিলায় সেই টিকার কার্যকারিতা প্রায় ৬৪ শতাংশ৷ তবে প্রায় সব গবেষণায় এটা মেনে নেওয়া হয়েছে, যে সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তরা করোনায় আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন প্রায় হয় না বললেই চলে৷
বাজারে চালু যে কোনও একটি কোভিড টিকা নেয়া থাকলে তা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক রূপ ডেল্টার আক্রমণ ঠেকাতে পারবে না। ওই সংক্রমণের আশঙ্কা কমতে পারে যে কোনও চালু প্রতিষেধকের দু’টি টিকা নেয়া থাকলে। না হলে তা অসম্ভব।
তবে এবার ইসরায়েলের এই গবেষণার ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করছে ন্যাচারে প্রকাশিত গবেষণা। এই গবেষণা থেকে জানা গেছে, মডার্না বা ফাইজার কিংবা অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা সিনোভ্যাক, এর কোনটাই প্রতিরোধ করতে পারবে না ডেল্টার সংক্রমণ।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাজারে চালু যে কোনও একটি কোভিড টিকা নেয়া থাকলে তা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক রূপ ডেল্টার আক্রমণ ঠেকাতে পারবে না। ওই সংক্রমণের আশঙ্কা কমতে পারে যে কোনও চালু প্রতিষেধকের দু’টি টিকা নেয়া থাকলে। না হলে তা অসম্ভব।
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)’-এর একটি গবেষণা জানিয়েছিল, কেউ যদি কোভিড থেকে এক বার সেরে ওঠেন এবং তার পর যে কোনও কোভিড প্রতিষেধকের একটি টিকা নিয়ে থাকেন, তা হলে তিনি ডেল্টা রূপের সংক্রমণ এড়ানোর ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত থাকতে পারেন।
বৃহস্পতিবার নেচারে প্রকাশিত গবেষণাপত্র আইসিএমআর’র গবেষণার ফলাফলকে অস্বীকার করল। জানাল, বাজারে চালু যে কোনও প্রতিষেধকের দু’টি কোভিড টিকা নেয়া থাকলে, তবেই একমাত্র ডেল্টার সংক্রমণ রুখতে পারার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। শুধু একটি টিকা নেয়া থাকলে কাউকে ডেল্টা ফের সংক্রমিত করতে পারে। সে বার তার কোভিড গুরুতরও হয়ে উঠতে পারে।
কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীরা ওই তিনটি প্রতিষেধকের একটি টিকা নেয়ার পরেও ডেল্টা রূপের মাধ্যমে ফের সংক্রমিত হয়েছেন। অনেকের ক্ষেত্রে সেই কোভিড ভয়াবহও হয়ে উঠেছে।
গবেষকরা মডার্না, ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত কোভিড টিকাগুলি পরীক্ষা করে দেখেন। তাতে দেখা যায়, কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীরা ওই তিনটি প্রতিষেধকের একটি টিকা নেয়ার পরেও ডেল্টা রূপের মাধ্যমে ফের সংক্রমিত হয়েছেন। অনেকের ক্ষেত্রে সেই কোভিড ভয়াবহও হয়ে উঠেছে।
এই পর্যবেক্ষণ থেকেই গবেষকদের সিদ্ধান্ত, প্রতিষেধকগুলোর একটি টিকা ডেল্টার বিরুদ্ধে পুরোপুরি সফল হতে পারছে না। তাদের বক্তব্য, বাজারে চালু অন্য টিকাগুলো, যেগুলো হু’র অনুমোদন এখনও পায়নি, সেগুলো ডেল্টার বিরুদ্ধে আরও বেশি ব্যর্থ হবে। কারণ, কার্যকারিতার মানদণ্ডে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলেই সেগুলো অনুমোদন এখনও পায়নি।
দ্বিতীয় ডোজ পাবার ছয় মাস পর প্রতিরোধ শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকির ভিত্তিতে তৃতীয় ‘বুস্টার’ ডোজের প্রয়োজন হতে পারে৷
এদিকে ডেল্টা ও ভবিষ্যতে অন্যান্য সম্ভাব্য আরও ছোঁয়াচে ও মারাত্মক সংস্করণের মোকাবিলা করতে তৃতীয় ডোজ প্রয়োগ করতে চাইছে ফাইজার কোম্পানি৷ আগামী মাসেই মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে সেই লক্ষ্যে আবেদন জমা দেবার পরিকল্পনা রয়েছে৷ কোম্পানির প্রধান বিজ্ঞানী মিকায়েল ডলস্টেন এই খবর জানিয়েছেন৷
তার মতে, দ্বিতীয় ডোজ পাবার ছয় মাস পর প্রতিরোধ শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকির ভিত্তিতে তৃতীয় ‘বুস্টার’ ডোজের প্রয়োজন হতে পারে৷ ইসরায়েলের গবেষণায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে৷ বিশেষ করে ডেল্টার মতো জোরালো ভেরিয়েন্টের মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে৷ য়ুরোপের কিছু দেশ ইতোমধ্যেই ফাইজার-বায়োনটেকের টিকার তৃতীয় ডোজের বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে৷ ফলে আমেরিকার আগেই সম্ভবত য়ুরোপে এই পদক্ষেপ অনুমোদন পেতে পারে বলে ডলস্টেন মনে করেন৷
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫০২
আপনার মতামত জানানঃ