যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়া-চীন বিশ্ব শক্তির অভিন্ন টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে গত বেশ কয়েক বছর ধরে মস্কো ও বেইজিং নিবিড় সহযেগিতার বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। এ দু’দেশ অর্থনৈতিক, সামরিক ও জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
২০০১ সালে ২০ বছর মেয়াদী বন্ধুত্ব-সহযোগিতার একটি চুক্তি করেছিল রাশিয়া আর চীন। গতকাল সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
ভিডিও কনফারেন্সে শির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর কথা জানিয়ে পুতিন বলেন, ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব চুক্তি জাতীয় ঐক্য ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য দুই পক্ষের সমর্থন ও সহযোগিতাকে জোরদার করবে।
রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, চীন ও রাশিয়া উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী। সম্প্রতি এসব দেশের সঙ্গে নানা কারণে দেশ দুটির সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এমন মুহূর্তে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিল বেইজিং ও মস্কো।
পুতিন বলেছেন, ‘আজকের বিশ্বে এমন চুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। ভূরাজনীতিতে গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ভেস্তে যাচ্ছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে সংঘাত বেড়ে চলেছে। তাই বিশ্বকে স্থিতিশীল রাখতে রাশিয়া ও চীনের আন্তসহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
পুতিন বলেছেন, ২০২২ সালে ২০ বছর শেষ হওয়ার পর চুক্তির মেয়াদ স্বয়ংক্রিভাবে পাঁচ বছরের জন্য বেড়ে যাবে।
তিনি চুক্তিটির প্রশংসা করে বলেন, বৈশ্বিক বিষয়ে এ চুক্তি চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করছে।
ক্রেমলিন থেকে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে শি বলেন, অশান্তি ও পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে যাওয়া এ বিশ্বে মানবতা নানা ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করছে। চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিবাচক শক্তির যোগান দিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, চীন রাশিয়ার বন্ধুত্ব নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল থেকে শুরু করে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ আর যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার সাইবার হামলার অভিযোগে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তলানিতে ঠেকেছে চীন-মার্কিন সম্পর্কও।
ঠিক এমন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চাইছে রাশিয়া ও চীন। যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ঠেকাতে ইতোমধ্যে চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি তারই অংশ।
রাশিয়া ও চীনের এই চুক্তির নবায়ণ পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে এক হুঁশিয়ারি হিসাবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
রাশিয়াকে উপেক্ষা করে কৃষ্ণসাগরে সামরিক মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন
রাশিয়ার ঘোর আপত্তি উপেক্ষা করে কৃষ্ণ সাগর এবং দক্ষিণ ইউক্রেনে বড় ধরনের সামরিক মহড়ায় নামছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন। এতে ৩০টিরও বেশি দেশ অংশ নিচ্ছে।
২০২১ সালের এই সামরিক মহড়া আগামী দুই সপ্তাহ ধরে চলার কথা রয়েছে। সেখানে ন্যাটো জোটসহ অন্যান্য দেশের ৫ হাজার সামরিক সদস্য অংশ নেবে। এছাড়া ৩০টি যুদ্ধ জাহাজ এবং অত্যাধুনিক বিমান মহড়ায় থাকছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী ইউএসএস রস এবং ইউএস মেরিন কর্পস থাকছে কৃষ্ণ সাগরে এই সামরিক কর্মযজ্ঞে।
মহড়ায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেন বলছে, নিজেদের অভিজ্ঞাতা অর্জনেই মূল লক্ষ্য। তবে মহড়া বাতিলের জন্য গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রকে জোর আহ্বান জানান ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত। কিন্তু আয়োজন বাতিল না করার প্রসঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করে জানিয়েছে, নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থে প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া দেখাত বাধ্য হবে মস্কো।
কৃষ্ণসাগরে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধজাহাজ নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের আবহের মধ্যে বড় পরিসরের এই মহড়ায় উত্তেজনা আরও বাড়বে।
সম্প্রতি কৃষ্ণ সাগরে যুক্তরাজ্যের একটি যুদ্ধ জাহাজকে সতর্ক করে এর গতিপথে গুলি ও বোমা ফেলার দাবি করে রাশিয়া। নিজেদের জলসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে দেশটিকে সতর্কবার্তা দেয় মস্কো। এ নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনিত হয়েছে রাশিয়ার। যদিও সেখানে এমন কিছুই ঘটেনি বলে জানিয়েছে ব্রিটেন।
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই বিশাল পরিসরে সামরিক মহড়া হতে চলছে কৃষ্ণ সাগরের বুকে। আর মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ইউক্রেন। এতেই মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়ার।
২০১৪ সালে জোর করে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া। যদিও এটি আন্তর্জাতিকভাবে এখনও ইউক্রেনের উপদ্বীপ হিসেবেই স্বীকৃত। এরপর থেকেই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের অবনতি হয়। তাছাড়া, পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদেরকে রাশিয়ার সমর্থন দেওয়া নিয়েও ক্ষুব্ধ কিয়েভ। তার ওপর এ বছর ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েন দু’দেশের উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৪
আপনার মতামত জানানঃ