ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভিসহ দেশটির ৩৩টি নিউজ সাইট বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই এসব সাইটে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হতো। রয়টার্সের খবর।
এদিকে ৩৩ ইরানি সাইট বন্ধ করার পরদিনই ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত বিভিন্ন বীমা, তেল এবং জাহাজ চলাচল নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে ইরানের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে কালো তালিকা থেকে অপসারণেও সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের ৩৩টি ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ এনে ইরান-সংশ্লিষ্ট এবং ইরানি ৩৩ সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই এবং বাণিজ্য বিভাগ মঙ্গলবার থেকে এসব ওয়েবসাইট অফলাইনে দিয়েছে বলে খবর দিয়েছে রয়টার্স।
বন্ধের পর প্রবেশের চেষ্টার করলে লেখা আসে সাইটগুলো জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে মার্কিন বিচার মন্ত্রণালয়, ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের লোগো প্রদর্শিত হচ্ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে ওয়েবসাইটগুলোকে অফলাইন করে দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন ডোমেইন খুলে ওয়েবসাইটগুলো আবারও সচল হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় আদালতের রায়ে যুক্তরাষ্ট্র আজ ইরানিয়ান ইসলামিক রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন ইউনিয়নের ব্যবহার করা ৩৩টি ওয়েবসাইট এবং কাতাইব হিজবাল্লাহ পরিচালিত ৩টি ওয়েবসাইট বন্ধ করেছে।”
কাতাইব হিজবাল্লাহকে ইরান সমর্থিত ইরাকি ‘সশস্ত্র গোষ্ঠী’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা করা বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বন্ধ করা সাইটগুলোর মধ্যে ইরানের ইংরেজি ভাষার সরকারি গণমাধ্যম প্রেস টিভি, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করা ইরানের আল মাসিরাহ টিভি ও আরবি ভাষায় প্রচারিত ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আল-আলাম অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘আইআরটিভিইউ’ এর মালিকানায় ৩৩টি ডোমেইন ব্যবহার করা হতে। কিন্তু ডোমেইন ব্যবহারের জন্য ‘ট্রেজারিজ অফিস অব ফরেইন অ্যাসেটস কন্ট্রোল’ থেকে নিবন্ধন করেনি আইআরটিভিইউ।
বিবৃতিতে জানানো হয়, কাতাইব হিজবাল্লাহর পক্ষ থেকেও কোনো ডোমেইন নিবন্ধন নেওয়া হয়নি।
মঙ্গলবার ইরানের সঙ্গে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলোকে নোটিস দিয়ে জানানো হয়, আইনি ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
ইরানি সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইরানের বেশ কিছু গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট এবং ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী ইয়েমেনের ‘হুথি মুভমেন্টের’ মতো সংগঠনগুলোর সাইট বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
হুথি পরিচালিত আরবি ভাষার মাসিরাহ টিভির ওয়েবসাইটে বলা হয়, “বন্ধ করার পরোয়ানা দিয়ে আলমাসিরাহডটনেট ডোমেইন জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার… আইনি ব্যবস্থা হিসেবে ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি, অফিস অব এক্সপোর্ট এনফোর্সমেন্ট এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এই পদক্ষেপ নিয়েছে।”
অবশ্য দ্রুততার সঙ্গেই তারা ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ ডট আলমাসিরাহ ডটক কম নামে নতুন একটি ওয়েবসাইট খুলে নিয়েছে।
ইরানের আরবি ভাষার ‘আলআলম টিভি’ তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানায়, “যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ আল-আলম টিভির ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাজ্য থেকে সম্প্রচারিত বাহরাইনের আরবি ভাষার চ্যানেল ‘লুয়ালুয়া টিভির’ ওয়েবসাইটেও বাজেয়াপ্তের নোটিস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বিশ্বব্যাপী ‘বিভ্রান্তিকর’ রাজনৈতিক তথ্য ছড়ানোর দায়ে গত অক্টোবরে ইরান’স রেভুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর ব্যবহার করা ওয়েব ডোমেইন বাজেয়াপ্ত করে যুক্তরাষ্ট্র।
সেসময় বিচার বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শ্রোতা, দর্শক ও পাঠকদের উদ্দেশ্য করে স্বাধীন গণমাধ্যম হিসেবে পরিচালিত আইআরজিসি’র ৯২টি ডোমেইনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে।
ইরানি সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারে সরকারিভাবে কোন মন্তব্য করেনি। তবে সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ আনা হয়।
মঙ্গলবার ইরানের আধা সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াইজেসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ, বাকস্বাধীনতার আহ্বানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী প্রেস টিভির উপস্থাপক মারজিয়া হাশেমি টুইট করেন, ‘আপনি যা বলছেন তা যদি ডিসি পছন্দ না করে তাহলে ডোমেইন বাজেয়াপ্ত করা – এটাই কি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আরেকটি নমুনা’?
ইরানের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে রাজি যুক্তরাষ্ট্র
২০১৫ সালে পাঁচ বিশ্ব শক্তির সঙ্গে সাক্ষরিত তেহরানের থমকে যাওয়া পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবনে ভিয়েনায় এক আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্র রাজি হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে ইরান। ভিয়েনায় পারমাণবিক চুক্তি বাঁচাতে ইরানের একদল প্রতিনিধি ও চুক্তিতে সাক্ষরকারী অন্য পাঁচ দেশ চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্য ষষ্ঠ দফার আলোচনায় অংশ নেয়। এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা পরোক্ষভাবে অংশ নেন।
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কারণে ইরানের সঙ্গে এই আলোচনা রোববার দু’দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। ইরানের রক্ষণশীল বিচার বিভাগের প্রধান ইব্রাহিম রাইসি গত শুক্রবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। দেশটির কট্টরপন্থী এই বিচারক ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাইসিও যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় রয়েছেন। আগামী আগস্টে তিনি দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হবেন।
ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ মাহমুদ ভায়েজি বলেছেন, সব ধরনের বীমা, তেল এবং শিপিং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে; যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আরোপ করা হয়েছিল।
দেশটির সরকারি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী ট্রাম্প আমলের আরোপিত এক হাজার ৪০টি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে ওয়াশিংটন। এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অভ্যন্তরীণ পরিষদের কিছু ব্যক্তি ও সদস্যের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান দীর্ঘদিনের পুরনো শত্রু হলেও ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত এক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যাবার পর দু দেশের সম্পর্ক আরো খারাপ হতে থাকে।
ইরান ও ৬টি শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্পাদিত ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর নতুন ও কঠোর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এর জবাবে ইরানও তাদের পরমাণু কর্মসূচির ওপর আরোপিত সীমা লংঘন করতে শুরু করে।
জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি এ চুক্তিতে আবার ফিরে আসতে চেয়েছেন, তবে দু পক্ষই বলছে, তার আগেই অন্য পক্ষকে চুক্তি মেনে চলা শুরু করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ