আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে দেশটিতে হামলা জোরদার করেছে তালেবান। তারা ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের কয়েক ডজন জেলা দখল করেছে। এ ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত লিওনস জানিয়েছেন, তালেবান ইতিমধ্যেই ৫০টি জেলা দখল করে নিয়েছে। তারা এবার আঞ্চলিক রাজধানীগুলি দখল করার দিকে এগোচ্ছে। গত মে মাস থেকে তারা এই কাজ করছে। জাতিসংঘের মতে, তালেবান এভাবে একের পর এক এলাকা দখল করে নিলে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া ধাক্কা খাবে। এলাকায় আবার উত্তেজনা দেখা দেবে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলে যাবে। ইতিমধ্যেই সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তারপর থেকে তালেবান আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়েছে। তাদের এতদিন শক্ত ঘাঁটি ছিল দক্ষিণ আফগানিস্তান। তারা এবার উত্তর দিকে একের পর এক এলাকা দখল করছে।
আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তালেবান তাজিকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্ত-শহর দখল করে নিয়েছে। এছাড়া উত্তরের আরো দুইটি জালো নাহরিন এবং বাঘলান-ই-মারকাজিও তারা কব্জা করেছে।
লিওনস বলেছেন, তালেবান আগ্রাসী সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। তারা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তারা যদি এই সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখে, তা হলে তা খুবই দুঃখজনক হবে। এর ফলে কাছে ও দূরের অনেক দেশই নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে।
কী করবে আমেরিকা
তালেবান যেভাবে দ্রুত এলাকা দখল করছে, তাতে আমেরিকা কী করবে? মার্কিন কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, তারা সেনা প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু একইসঙ্গে তারা তালেবান-অভিযান নিয়ে সব তথ্য জোগাড় করছেন। প্রয়োজন হলে প্রতিবেশী কোনো দেশ থেকে তারা তালেবানের উপর আঘাত হানবেন।
কিন্তু এই অঞ্চলে নতুন কোনো মার্কিন সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা কঠিন হবে। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া এই অঞ্চলে মার্কিন সমরিক ঘাঁটির বিরোধিতা করবে। পাকিস্তানও জানিয়ে দিয়েছে, তারা সেখানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি করতে দেবে না।
জাতিসংঘে মার্কিন দূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ড বলেছেন, ”আফগান জনগণ শান্তি ও স্থায়িত্ব চায়। সে জন্য অ্যামেরিকা কূটনৈতিক ও সামরিক সাহায্য করবে।’
আফগান প্রেসিডেন্ট গনির দাবি, দেশটির সরকারি বাহিনী তালেবানসহ অন্য জঙ্গিদের মোকাবিলা করতে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা তালেবানের সঙ্গে পেরে উঠছে না।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেই হামলার জেরে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে যায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ইতিহাসের দীর্ঘতম এ যুদ্ধের ২০ বছর পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে গত এপ্রিলে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। এই ঘোষণা অনুযায়ী, আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, আফগানিস্তানে তাদের সামরিক উপস্থিতি থাকবে না। কিন্তু কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট অনেক বিশ্লেষক আগে থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে আসছেন, আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান জঙ্গিরা দেশটির ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/১৬০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ