ইসরায়েলের সঙ্গে করা ‘ভ্যাকসিন সোয়াপ’ চুক্তি বাতিল করেছে ফিলিস্তিন। প্রাথমিকভাবে ফিলিস্তিনে পাঠানো ফাইজারের টিকার মেয়াদ প্রায় শেষদিকে হওয়ায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে প্যালেস্টাইনি কর্তৃপক্ষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ফিলিস্তিন যখন এই বদল চুক্তি করেছিল, তখনই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই বলেছিলেন, ইসরায়েলের কাছ থেকে অকেজো টিকা নেয়া হচ্ছে যা আদৌ কোনো ফল দেবে না।
শুক্রবার এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-খলিফার সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে দেশটির অন্যতম মুখপাত্র ইব্রাহিম মেলহেম বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় ইসরায়েল থেকে পাওয়া ফাইজার টিকার প্রথম চালানগুলো পরীক্ষা করে দেখেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এটা স্পষ্ট যে, হাতে আসা ৯০ হাজার ডোজ টিকা চুক্তিপত্রের শর্ত পূরণ করেনি। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মাদ শিতায়হের নির্দেশ অনুযায়ী টিকা বদলের চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে এবং ইসরায়েল থেকে আসা টিকাগুলো ফেরত দেয়া হচ্ছে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনকে ১৪ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। বিনিময়ে এই বছরের শেষদিকে একই পরিমাণ ডোজ ইসরায়েলকে ফেরত দিতে হতো ফিলিস্তিনের। কিন্তু ফিলিস্তিনে প্রথম চালানে পাঠানো ৯০ হাজার টিকার মেয়াদ প্রায় শেষ দিকে হওয়ায় চুক্তিটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আলকাইলা বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছিল মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখটি জুলাই বা আগস্টে। এটি হলে আমরা টিকাগুলো ব্যবহারের সময় পেতাম কিন্তু দেখা গেল জুনেই এগুলোর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এগুলি ব্যবহারের পর্যাপ্ত সময় নেই, তাই আমরা সেগুলি প্রত্যাখ্যান করেছি।’
এর আগে মেয়াদ প্রায় ফুরিয়ে আসা ১০ লাখ ডোজ টিকা ফিলিস্তিনকে দিয়ে বদলে আগামী বছরের শেষ নাগাদ মেয়াদ আছে এমন টিকা নেয়ার কথা শুক্রবার জানায় ইসরায়েল।
এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের কার্যালয় জানায়, ‘ইসরায়েল ফিলিস্তিনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে এবং সে অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ টিকা ফিলিস্তিনকে দেয়া হবে। তবে খুব দ্রুত ব্যবহার করতে হবে ডোজগুলো, কারণ আর কিছুদিন পরেই এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়বে।’
এমনকি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ ১৪ লাখ ডোজ পর্যন্ত আদান-প্রদান হতে পারে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তবে এতে ঠিক কবে নাগাদ টিকাগুলোর মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে তা বলা হয়নি।
ইসরায়েলের ৫০ লাখ ১০ হাজার মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ করোনা টিকার দুই ডোজই নিয়েছেন। বাকিদের প্রথম ডোজ নেওয়া হয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনের দুই অংশ- গাজা ভূখণ্ড ও পশ্চিমতীরে করোনা টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সদ্য শেষ হওয়া ১১ দিনের যুদ্ধে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই টিকার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ছোড়া বেলুনে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের আটটি স্থানে আগুন ধরে যায়। এর জবাবে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলের বাহিনী বলেছে, সশস্ত্র সংগঠন হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। খান ইউনিস ও গাজা শহরে এসব হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান আভিভ কোহাভি। হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে আইডিএফ হামলা চালিয়ে যাবে। এ ছাড়া গাজা উপত্যকায় যা ঘটছে, তার জন্য হামাসকে দায়ী করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিডের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আলোচনা করা হয়। এর পাশাপাশি ইরান ছাড়াও আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়ে তারা আলোচনা করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৪০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ