মোট জনসংখ্যার প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের মধ্যে মোবাইলের মালিক এবং তাদের কাছে ইন্টারনেট আছে এমন জরিপে ভারতের পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ, তবে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার(১৭ জুন) মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ তাদের একটি জরিপে এই তথ্য জানিয়েছে।
চতুর্থ বার্ষিক ‘জিএসএমএ মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২১’-এর তথ্য থেকে জানা গেছে, নারীদের বিপরীতে বাংলাদেশের ৮৪ শতাংশ পুরুষের মোবাইলে ইন্টারনেট আছে।
অবাক করার বিষয় হলো ভারতের পুরুষেরা বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে, ৭৯ শতাংশ। তবে ভারতীয় নারীরা এগিয়ে আছেন, ৬৭ শতাংশ।
এশিয়ায় ভারত-বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পাকিস্তান। দেশটির ৭৮ শতাংশ পুরুষ মোবাইলের মালিক এবং তারা ডেটা ব্যবহার করেন। সেখানে নারীদের হার ৫২ শতাংশ।
বাংলাদেশে বয়স অনুযায়ী মোবাইলের মালিকানায় জেন্ডার গ্যাপ প্রকট। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে জেন্ডার গ্যাপ ১৭ শতাংশ। এই বয়সী পুরুষদের তুলনায় ৩৯ শতাংশ কম নারী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যাদের বয়স আবার ৫৫ বছরের বেশি তাদের মধ্যে মালিকানার দিক থেকে জেন্ডার গ্যাপ ৪৬ শতাংশ। এই বয়সী পুরুষদের তুলনায় ৮২ শতাংশ কম নারী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
মোবাইল ইন্টারনেটের সচেতনতার বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৭৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৬৬ শতাংশ নারী মোবাইল ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতন; কিন্তু সবাই এটি কাজে লাগান না। মাত্র ৩৩ শতাংশ পুরুষ এবং ১৯ শতাংশ নারী তাদের সচেতনতা কাজে লাগান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া এবং পাকিস্তানের নারীরা মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে পারিবারিক বাধার মুখে পড়েন।
জিএসএমএ তাদের সূচনা বক্তব্যে বলেছে, একটা মোবাইল এবং তার ইন্টারনেট ব্যবস্থা জীবন বদলে দিতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো নারী-পুরুষের এই সুযোগ পাওয়ার হারে অনেক ব্যবধান আছে। তবে গত কয়েক বছরে সেটি কমছে।
জরিপে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের আটটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
জরিপের জন্য ভারত বাদে অন্য দেশগুলো থেকে ১৮ কিংবা তার বেশি বয়সী ১ হাজার নারী-পুরুষকে বেছে নেয়া হয়। ভারত থেকে নেয়া হয়েছে ২ হাজার জনকে।
বিশেষজ্ঞরা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে নারীদের প্রাপ্যতা পুরুষের তুলনায় কম হওয়ার দুটো মূল কারণের উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো শ্রমবাজারে নারীর কম অংশগ্রহণ ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব।
তারা বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারে নারী-পুরুষের ব্যবধান অনেক। কেনার স্বাধীনতাও সংকুচিত। সেখানে আর্থিক সক্ষমতা একটি প্রতিবন্ধকতা। তবু মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারে নারীদের সচেতনতা কিন্তু অনেকে বেড়েছে। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সচেতনতার মাত্রা প্রায় সমান। দিন দিন নারীদের সচেতনতার মাত্রা বেড়েছে। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নারীদের এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
তারা জানান, মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে অনেক নারীকেই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। স্ত্রী বেশি কথা বলেন, সন্তানের দিকে নজর দেন না বা নিজের মা-বাবার সঙ্গে বেশি কথা বলেন— এমন সব অজুহাত এনে নির্যাতনে ঘটনা ঘটে। অথচ পরিবারের পুরুষটি দিব্যি দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনে বা ইন্টারনেটে থাকছেন। এ নিয়ে অভিযোগ করলেও নিপীড়নের শিকার হতে হয় নারীদের।
এর আগে আন্তর্জাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর সংগঠন জিএসএমএ’র “মোবাইলনির্ভর ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি” শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৪১ শতাংশের মুঠোয় আছে স্মার্টফোন। এ হার ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি নেপালের চেয়েও কম। আর বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কারণ স্মার্টফোনে উচ্চ কর।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তুলনায় যে দেশগুলো স্মার্টফোন ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। এদের মধ্যে ভারত সর্বোচ্চ ৬৯ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী নিয়ে তালিকার প্রথমে রয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় ৬০ শতাংশ, নেপালে ৫৩ শতাংশ ও পাকিস্তানে ৫১ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে।
অপরদিকে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মোবাইল ফোন সংযোগের ৫৪ শতাংশ প্রকৃত ব্যবহারকারী বা “ইউনিক ইউজার” যাদের ৫৯ শতাংশ এখনো স্মার্টফোন ব্যবহার করে না।
তবে দেশে “ফোর-জি” নেটওয়ার্ক সেবার মান বেড়েছে বলে জানিয়েছে জিএসএমএর প্রতিবেদন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০১৮ সাল নাগাদ দেশের ৭৯ শতাংশ এলাকায় শুধুমাত্র ফোর-জি নেটওয়ার্ক থাকলেও ২০২০ সালে এসে তা বেড়ে ৯৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে ভারতে ৯৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৯৩, পাকিস্তানে ৮০ ও নেপালে ৭৫ শতাংশ এলাকায় ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবা রয়েছে।
কিন্তু ফোর-জি নেটওয়ার্ক সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ৪৭ শতাংশ মানুষই এখনও টু-জি নেটওয়ার্ক সেবা ব্যবহার করছে। এছাড়া ২৮ শতাংশ মানুষ ফোর-জি নেটওয়ার্ক ও ২৫ শতাংশ মানুষ থ্রি-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ