মিয়ানমারে স্থানীয় এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর জান্তা সেনাবাহিনী পুরো একটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। এতে পালাতে না পেরে নিহত হয়েছেন ২ জন। মঙ্গলবার (১৫ জুন) দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় কিন মা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
বুধবার গ্রামটির বেশ কয়েকজন বাসিন্দা এ ঘটনার জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন এমআরটিভির খবরে বলা হয়েছে, মাগওয়ে অঞ্চলের গ্রাম কিন মা-তে মঙ্গলবার ‘সন্ত্রাসীরা’ আগুন লাগিয়ে দেয়। গ্রামটিতে প্রায় ৮০০ বাসিন্দা রয়েছে। আর যে গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে অন্যকিছু বলা হচ্ছে তারা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে সামরিক বাহিনীর সুনামহানির চেষ্টা করছে’।
এমআরটিভি বলেছে, ৪০ জন ‘সন্ত্রাসী’ কিন মা-র একটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে, এখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গ্রামটির ২২৫টি বাড়ির মধ্যে শতাধিক বাড়ি পুড়ে যায়।
গ্রামটির বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বুধবার কিন মাতে শুধু ৩০টির মতো ঘর অবশিষ্ট ছিল। মঙ্গলবারের আগুনে প্রায় ২০০ ঘর পুড়ে গেছে।
গ্রামবাসীরা বলেন, জান্তা বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দুই বৃদ্ধ আগুনে পুড়ে মারা যায়।
নাসার স্যাটেলাইট ফায়ার-ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে রেকর্ড করার মতো বড় ছিল আগুনটি, যা মঙ্গলবার ১৫২২ জিএমটিতে রেকর্ড করা হয়; জানিয়েছে রয়টার্স।
পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে গ্রামবাসীরা বলেন, জান্তা বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে আর তাতে অন্তত দুই জন পুড়ে মারা যায়।
গ্রামটির বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের সহায়তায় নিয়োজিত ৩২ বছর বয়সী একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, যে দুই জন মারা গেছেন তারা বৃদ্ধ, আগুন লাগার পর বাড়ি ছেড়ে পালাতে পারেননি তারা। কিছু লোক বুধবার গ্রামে ফিরে তাদের মৃতদেহ দেখতে পায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্সের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন সেই গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দাই নিকটবর্তী বনগুলোতে লুকিয়ে আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কিন মা নামের ওই গ্রামটির ২৪০টি ঘরের মধ্যে ২০০টিই পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা জানান, জান্তা সরকারের বিরোধী স্থানীয় মিলিশিয়াদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের পর গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
একজন বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, মঙ্গলবার পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)-এর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই জাতীয় দলগুলি গঠিত হয় এবং তারা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাড়িতে তৈরি অস্ত্র দিয়ে লড়াই শুরু করেছে।
তিনি বলেন, পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের সদস্যরা গ্রামে ফিরলে নিরাপত্তা বাহিনী গ্রামের দক্ষিণ পাশে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করে। বলতে গেলে, পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
অন্য এক বাসিন্দা বলেন, গ্রামে ঢুকে সেনাবাহিনী গুলি চালানো ও বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়াসহ তাণ্ডব শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে তিনি ও আশপাশের লোকজন পাশের জঙ্গলে পালিয়ে যান। কিন্তু দু’জন বৃদ্ধ লোক পালাতে পারেননি। তারা ঘরের ভেতরেই আগুনে পুড়ে মারা যান। সেনাবাহিনীর হামলার পর থেকে আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।
মিয়ানমারে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ড্যান চাগ এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘খবর এসেছে যে, ম্যাগওয়েতে জান্তা সরকার একটি পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রবীণ বাসিন্দাদের হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে যে, সেনাবাহিনী ভয়াবহ অপরাধ অব্যাহত রেখেছে এবং মিয়ানমারের জনগণের প্রতি তাদের কোনও শ্রদ্ধাবোধ নেই।’
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অবশ্য অগ্নিসংযোগের জন্য ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করা হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে, তারা অগ্নিসংযোগের যে খবর প্রচার করেছে অন্য যে কোনও মিডিয়া সেটির বাইরে ভিন্ন কারণ প্রচারের মানে হচ্ছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেনাবাহিনীর ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে চাইছে।
অং সান সু চি-র নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে গত ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে বর্মি সেনাবাহিনী। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথে জোরালো প্রতিবাদ গড়ে উঠলে অ্যাকশনে যায় জান্তা সরকার। হত্যা করা হয় আট শতাধিক বিক্ষোভকারীকে। রাজপথে বিক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়ে এলেও সেনা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির বহু গোষ্ঠী। কদিন আগেই দেশটির চিন রাজ্যে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ফাঁদ পেতে ২৭ জন সরকারি সেনাকে হত্যা করে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার কিন মা গ্রামে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলো।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ