সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ওই দিন তিনি রংপুর থেকে ঢাকায় আসছিলেন।
আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য জানিয়ে দারুসসালাম ও মিরপুর থানায় গেলে কোনো থানাই সাধারণ ডায়েরি বা মামলা গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ করছেন তার পরিবার।
পরিবার কী বলছে?
আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের স্ত্রী সাবেকুন নাহার গণমাধ্যমকে বলেছেন, আদনান বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি আরো বলেন, ‘রাত ২টা ৩৭ মিনিটে তার (আদনান) সাথে শেষ কথা হয়, তিনি তখন বলেছেন কাছাকাছি চলে আসছেন। তিনি তখন গাবতলী ছিলেন। এরপর রাত ৩টা থেকে তার ফোন বন্ধ পাই, এখনো পর্যন্ত নম্বর বন্ধই পাচ্ছি। নিখোঁজ হওয়ার সময় তার সাথে গাড়িচালকসহ আরো তিনজন সহকর্মী ছিলেন।
ওই তিনজন সহকর্মী ও গাড়িটির কোনো খোঁজ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করছেন আদনানের পরিবার। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
কারণ জানতে চাইলে সাবেকুন নাহার পাল্টা প্রশ্ন করেন, কোথায় মামলা করবো, কার কাছে অভিযোগ করবো? মামলা করবো কী, কেউ তো জিডিই নিতে রাজী হচ্ছে না।’
তিনি বলেছেন, স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয় নিয়ে শুক্রবার বিকেলেই পুলিশের শরণাপন্ন হন তারা।
কিন্তু রোববার বিকেলে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাবতলী সংলগ্ন দারুসসালাম থানা কিংবা মিরপুর থানা কেউই মামলা গ্রহণ করেনি। সাবেকুন নাহার অভিযোগ করেন, ‘থানায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। কোনো থানাই দায়িত্ব নিচ্ছে না, এক থানা আরেক থানাকে দেখিয়ে দিচ্ছে।’ তবে রোববার সকালে রংপুর সদর থানায় এ নিয়ে একটি জিডি করা হয়েছে আদনানের মায়ের পক্ষ থেকে।
কী বলছে পুলিশ?
আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দারুসসালাম ও মিরপুর থানার সাথে যোগাযোগ করা হলে মিরপুর থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ স্বীকার করেছেন যেকোনো সাধারণ ডায়েরি বা মামলা গ্রহণ করেননি তারা।
তিনি কারণ হিসেবে বলছেন, ‘তিনি (আদনান) কোথা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন সেই লোকেশনটা তো আমরা নিশ্চিত না। তিনি গাবতলী থেকে নিখোঁজ হয়েছে, সেটা তো আমরা জানি না। সেক্ষেত্রে যেখান থেকে তিনি রওনা হয়েছেন, সেই রংপুর অথবা তার ঢাকায় যেখানে বাসা, সেখানে জিডি হতে পারে বা মামলা হতে পারে। এখন পুলিশ আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
তোফায়েল আহমেদ আহমেদ বলেছেন, এজন্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেছেন, গাবতলী এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে আদনানকে বা তার গাড়িকে দেখা যায়নি। বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের আলাদা কোনো বিভাগ নেই।
কে এই আবু তোহা মুহাম্মদ আদনান?
ফেসবুক, ইউটিউব ঘেঁটে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রংপুর সদরের বাসিন্দা তোহা নিজেকে ইসলামি স্কলার দাবি করেন। পড়াশোনা শেষ না হলেও তিনি ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজের মতো করে ব্যাখা দিয়ে যাচ্ছেন অনেকদিন ধরেই, যা নিয়ে বিতর্কও আছে।
সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত তার বক্তব্যে ঢাকা শহরকে ‘কেয়ামতের শহর’ হিসাবে উল্লেখ করেন।
নারীর ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন তিনি। দাবি করেছেন, ‘যে নারী পুরুষের সঙ্গে পাবলিক বাসে উঠে অফিসে যায়, যে নারী সহকর্মী পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন তারা দাজ্জালের বাহিনীর সদস্য। ইমাম মাহাদীর বিরুদ্ধে এই নারীরাই যুদ্ধ করবে।’
ইসলাম ধর্মমতে দুনিয়া ধ্বংস তথা কিয়ামতের আগে মুসলিমদের সঙ্গে দাজ্জালের বাহিনীর লড়াই হবে। আর মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন ইমাম মাহাদী। ইমাম মাহাদী পৃথিবীতে কবে আসবেন, এ নিয়ে অবশ্য ইসলামিক বক্তাদের মধ্যে বিরোধ আছে। কেউ কেউ নিজেকে ইমাম মাহাদী পরিচয়ও দিয়েছেন নানা সময়।
তোহার দাবি, পরকালে দোজখে নারীদের সংখ্যা বেশি হবে। আর এর জন্য তার ভাষায় ‘নারীর উদ্ধত’ আচরণ দায়ী। প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও তোহা নানা সময় উসকানি দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ//১৮১৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ