ইথিওপিয়ার তাইগ্রে ও আশপাশের অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ চলছে। ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে আছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ২০ লাখ মারা যেতে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। খবর রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি
বৃহস্পতিবার(১০ জুন) জাতিসংঘের খাদ্য সংক্রান্ত সংস্থা একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, তাইগ্রের সাড়ে তিন লাখ মানুষ মন্বন্তর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সোমালিয়ায় যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়ংকর।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মন্বন্তরে সোমালিয়ায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ মানুষের। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল শিশু। তাইগ্রের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ বলে মনে করা হচ্ছে। শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
জাতিসংঘের বক্তব্য, তাইগ্রের অবস্থা প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে। তবে এখনো পরিস্থিতির পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের কাছে খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু তার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। শক্তিশালী দেশগুলি যেন সেই অর্থের ব্যবস্থা করে। নইলে ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইথিওপিয়ার এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে টিপিএলএফের নেতৃত্বে ইথিওপিয়া থেকে সামরিক সরকার উৎখাত করা হয়। এরপর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আবি আহমেদ ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগপর্যন্ত দেশটির রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ ছিল এই গোষ্ঠীর হাতে। কিন্তু গত বছর ইথিওপিয়ার ফেডারেল সেনাবাহিনী এবং টিপিএলএফ-এর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের জেরে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্লেষণে বলা হয়, ইথিওপিয়ার ওই তাইগ্রে অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ‘ভয়ংকর সংকটের’ মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী আমহারা ও আফার এলাকার পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গ্রামের ভিতর এখনো খাবার পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না। অস্ত্র নিয়ে গ্রামের বাইরে পাহারা দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের মোকাবিলা করার জন্যও এগিয়ে আসতে হবে শক্তিধর দেশগুলিকে।
জাতিসংঘের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সেখানকার খাদ্যসংকট ‘বিপর্যয়ের’ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেখানকার মানুষ অনাহারে থাকছে, মারা যাচ্ছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা ও ইউনিসেফ এ সংকট দূর করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, তাইগ্রের একটি অঞ্চল কাফতা হুমেরা অঞ্চলের মানুষ জানান, তারা এই সপ্তাহে অনাহারে ছিলেন।
ওই অঞ্চলের একজন বলেন, আমাদের হাতে কিছু নেই খাওয়ার মতো।
না থাকার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধ চলার সময় তাদের ফসল এবং গৃহপালিত পশু লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করা বিদ্রোহীরা তাদের সহায়তা চাইতেও বাধা দিচ্ছে।
এক কৃষক বলেন, আমরা লুকিয়ে রাখা ফসল খেয়ে কিছু দিন পার করেছি। কিন্তু আমাদের কাছে এখন আর অবশিষ্ট কিছু নেই। কেউ আমাদের কোনো সহায়তা দিচ্ছে না। এখানে প্রায় সবাই মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। ক্ষুধার কারণে আমাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। মৃত্যু আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। যে কারও চেহারার দিকে তাকালে আপনি ক্ষুধা দেখতে পাবেন।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা দেখেছেন ত্রাণের গাড়ি চলাচল করছে। কিন্তু তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে কেউই জানতে চায়নি।
‘দ্য ইনটেগ্রেটেড ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, তাইগ্রে, আমহারা এবং আফারে ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।’
সংঘাত, জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি, চলাচলের সীমাবদ্ধতা, সীমিত মানবিক প্রবেশাধিকার, ফসল ও জীবিকার সম্পদের ক্ষতি বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এতে।
তবে বিশ্লেষণে দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। যখন মৃত্যুহার, অপুষ্টি এবং ক্ষুধা কিছু নির্দিষ্ট মাপকাঠি পূরণ করে, তখনই দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়।
জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক কার্যক্রমের প্রধান মার্ক লোকক তাইগ্রে নিয়ে গঠিত আইএএসসি-র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি, শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিও এই কমিটির অংশ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান মার্ক লোকক বৃহস্পতিবার একটি উচ্চপর্যায়ের ভারচুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে জি সেভেন নেতাদের কাছে তিনি আর্জি জানান, তাইগ্রে নিয়ে যেন আলোচনা করেন তারা। অনাহার কমানোর প্রস্তাব নেন।
যুদ্ধ ও অতি খরায় তাইগ্রে ও পার্শ্ববর্তী ওলো অঞ্চলে ১৯৮৪ সালেও একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন এক মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারান।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ