জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. হুমায়ুন কবির মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (৭ জুন) বিকেলে পাবনা সদর থানায় দুদক পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে দুদক পাবনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মোজাম্মেল হক জানান, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া আবেদন ও ভাউচার তৈরি করে অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মজুমদার নিজেই অনুমোদন করে কলেজের ছাত্র সংসদ তহবিল, উন্নয়ন তহবিল, বিবিধ তহবিল এবং ভর্তি কার্যক্রম ও ফরম ফিলাপ তহবিলের ৫৬ লক্ষ ৮ হাজার ৯৮৬ টাকা অগ্রণী ব্যাঙ্ক কলেজ গেট শাখা থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৭ সাল থেকে দীর্ঘ কয়েক দফা তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এ মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি আরো জানান, কলেজটির ছাত্র সংসদের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও অধ্যক্ষ ছাত্র সংসদ তহবিল, যার হিসাব নম্বর ০২০০৫৩৫২৫৮৯ হতে পাঁচ ছাত্রলীগনেতা ও কর্মচারীর নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে ১৫ টি চেকের মাধ্যমে ৫ লাখ ২ হাজার টাকা, উন্নয়ন তহবিলের হিসাব নং ০২০০০০৫৩৫২৬৫৫ হতে কমিটির সুপারিশ ও কোটেশন ছাড়াই বিল ভাউচার করে ৩৮ টি চেকের মাধ্যমে ১৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৩৮ টাকা এবং বিবিধ তহবিল যার হিসাব নং ০২০০০০৫৩৪২৮১৬ হতে অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত বাস্তবায়ন কমিটি না করেই ভুয়া আবেদন ও বিল ভাউচার নিজেই অনুমোদন ৩৭টি চেকের মাধ্যমে ১৩ লক্ষ ৪ হাজার ৪২ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও উন্নয়ন তহবিলের বেসরকারী আদায় তহবিলের দুটি হিসাব থেকে ২৮ টি চেকের মাধ্যমে ১৮ লক্ষ ৩ হাজার ৭০৬ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। বহুদিন ধরে দুদক তন্য তন্য করে তদন্তের পর এ মামলাটি দায়ের করলো।
তবে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হলেই তাকে এ মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হবে না বলে জানিয়ে এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলার স্বার্থে প্রয়োজন হলে দুদকের ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ের নির্দেশে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
এদিকে অধ্যক্ষ প্রফেসর হুমায়ুন কবির মজুমদার বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দুদককে ভুল বুঝিয়ে আমাকে হেনস্থা করাচ্ছে। সঠিক তদন্ত করা হোক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য ভাউচার সরিয়ে দুর্নাম রটানো হচ্ছে।
সংশিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা যখন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তখন প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার মানও ভেঙ্গে পড়ে। আগামী প্রজন্মের স্বাভাবিক ও নৈতিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এসব প্রতিবন্ধকতার আশু সমাধান আবশ্যক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, শিক্ষকেরাই যখন অনৈতিকতায় ডুবে যান তখন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রজন্ম কী পেতে পারে এবিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। অধ্যক্ষের এইসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ