সাভারের আশুলিয়ায় চলন্ত বাসে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৮মে) রাতে সাভারের সিঅ্যান্ডবি বাইপাস সড়কের আশুলিয়ার গরুরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় শনিবার ভুক্তভোগী ওই তরুণী আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
আটককৃতরা হলেন- ঢাকার তুরাগ থানার গুলবাগ ইন্দ্রপুর ভাসমান গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আরিয়ান (১৮), কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর থানার তারাগুনা এলাকার মৃত আতিয়ারের ছেলে সাজু (২০), বগুড়া জেলার ধুনট থানার খাটিয়ামারি এলাকার সুলতান মিয়ার ছেলে সুমন (২৪), একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে সোহাগ (২৫), বগুড়ার ধুপচাচিয়া থানার জিয়ানগর গ্রামের সামছুলের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০) ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার ধামঘর এলাকার জহুর উদ্দিনের ছেলে মনোয়ার (২৪)। তারা সবাই তুরাগ থানার কামারপারা ভাসমান এলাকায় ভাড়া থেকে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল-নবীনগর মহাসড়কে মিনিবাস চালাতেন।
আশুলিয়া থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান ভিকটিম তরুণী মানিকগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জের বাসে উঠেছিলে, কিন্তু রাত আটটার দিকে নবীনগর বাস স্ট্যান্ডে তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এরপর তিনি নিউ গ্রাম বাংলা পরিবহন নামে একটি বাসে উঠেন টঙ্গী যাওয়ার উদ্দেশ্যে। পথে আশুলিয়া গরুর হাট এলাকার আগেই ওই বাসের অন্য যাত্রীদের নামিয়ে বাস আবার নবীনগরের দিকে যায় অভিযুক্তরা। পথে বাসের দরজা জানালা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণ করে চালক ও হেলপারসহ অন্যরা।
রাত প্রায় এগারটার দিকে আশুলিয়া ব্রিজ এলাকায় বাইপাস সড়কে বাসটিকে সন্দেহ হলে টহল পুলিশ ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে বাসটিকে থামাতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ছয়জনকে বাসসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সকালে ওই তরুণীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি নিজেই মামলা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে ওই তরুণী মানিকগঞ্জে তার বোনের বাড়ি গিয়েছিলেন। সেখান থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার পর ফিরতে গিয়েই এ ঘটনার শিকার হন তিনি।
বাংলাদেশে এর আগেও চলন্ত বাসে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে একটি চলন্ত বাসে একজন তরুণীকে গণধর্ষণের পর তাকে ঘাড় মটকে হত্যা করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশে মারাত্মক আলোড়ণ সৃষ্টি করেছিল। এর আগে ২০১৩ ভারতের দিল্লীতে চলন্ত বাসে নির্ভয়া হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছিল।
রাতের গণপরিবহনে নারীরা কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশে নারী যাত্রীদের অনেকেই বলছেন, রাতে চলাচলের ক্ষেত্রে পরিবহন সংশ্লিষ্ট লোকজন কিংবা পুরুষ যাত্রীদের দ্বারা শারীরিক কিংবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তারা। বেসরকারি সংগঠন একশন এইডের একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে দিনের বেলাতেই যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে নানারকম হেনস্থার শিকার হন নারী যাত্রীদের একটা বড় অংশ।
তাদের জরিপে, বাসে পুরুষ যাত্রীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন ৪২ শতাংশ নারী যাত্রী। এছাড়া পরিবহন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৩ শতাংশ নারী যাত্রী।
নারী অধিকার কর্মী কাশফিয়া ফিরোজ বলছিলেন, যে শহরে দিনের বেলা নারীরা নিরাপদ নয়, সে শহরে রাতেও নিরাপদ হবে না। নিরাপদ করতে হলে শহরটাকেই নারী বান্ধব করতে হবে। বাসের যারা হেলপার, ড্রাইভার আছেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। যেন বিপদে পড়লে নারীরা তাদেরকে রিপোর্ট করতে পারে এবং তারাও নারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ