যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ১৬ জুন প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসবেন। তৃতীয় নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে এ বৈঠক।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয় দেশের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে একধরনের উত্তেজনা রয়েছে। জেনেভায় বাইডেন-পুতিনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ের সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুই আলোচনায় উঠে আসবে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারেও দুই সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা বৈঠকে চালানো হবে।
গত ১৯ মার্চ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারিন জেন পিয়েরে বিশ্বের শক্তিধর এই দুই দেশের সরকারপ্রধানের বৈঠকের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘উপযুক্ত সময়ে’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ক্রেমলিনও এ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে। এক বিবৃতিতে ক্রেমলিন বলেছে, পুতিন ও বাইডেন কৌশলগত স্থিতিশীলতার ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। তারা আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের সুরাহা নিয়ে কথা বলবেন। তারা আলোচনা করবেন চলমান করোনা মহামারি নিয়েও।
গত ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সফরে যাচ্ছেন। আর এ সফরেই পুতিনের সঙ্গে তার দেখা হচ্ছে।
বাইডেন ও পুতিনের মধ্যকার আসন্ন বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ইতিমধ্যে আইসল্যান্ডে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে উভয় পক্ষ সম্পর্কোন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ক্রেমলিনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে উত্তেজনা রয়েছে। বাইডেন ক্ষমতায় এসে মস্কোর ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভানলিকে বিষপ্রয়োগ ও কারাবন্দী করা নিয়ে মস্কোর কড়া সমালোচনা করছে ওয়াশিংটন।
পুতিনের বিরুদ্ধে নাভানলিকে হত্যার জন্য বিষ প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যদিও পুতিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
গত মাসে এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিনকে ‘হত্যাকারী’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বাইডেন। তার এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় ক্রেমলিন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের আশা, বাইডেন-পুতিনের আসন্ন বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটতে পারে।
স্নায়ুযুদ্ধের সময়কাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনাকর সম্পর্ক স্পষ্ট হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনও সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি, তবে বিভিন্ন সময় প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়েছে শক্তিধর এই দুই দেশ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও দেশটিকে সেই ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চান। মধ্যপ্রাচ্য, চীন সাগরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অনেকসময় যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি অবস্থানও নিচ্ছে দেশটি।
ক্রাইমিয়া ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার একাধিক মিত্র দেশ মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এদিকে, রাশিয়ায় আরও দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে গত ৬ এপ্রিল একটি বিলে সই করেন পুতিন। বিলটিতে সই করে একে আইনে রূপ দেন তিনি। নতুন এই আইনের মাধ্যমে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেন ৬৮ বছর বয়সী এ নেতা। সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে বিলটির যাত্রা শুরু হয়।
প্রেসিডেন্ট পদে পুতিনের আরও ১২ বছর থাকতে দেশটির সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব গত বছর ১১ মার্চ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিলে অনুমোদন পায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ