দেশের কোনো ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উৎপাদনের অনুমতি দেয়া হবে কি না এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার (১৭মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় ডোজের বিষয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ করছেন। আমাদের তো তিন কোটি ডোজের অর্ডার আছে। তারা এ পর্যন্ত আমাদের ৭০ লাখ ডোজ দিয়েছে। এ ছাড়া টিকার বিষয়ে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু অগ্রগতিও আছে।’
উৎপাদনের চেয়ে টিকা কেনার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘টিকা উৎপাদন সময় সাপেক্ষে। তবে, টিকা উৎপাদনের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। তাই টিকা উৎপাদনের বিষয়ে যাদের সক্ষমতা আছে, তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভ্যাকসিন ক্রয় করব। আবার সঠিক প্রস্তাব আসলে দেশে উৎপাদন করব বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেক্ষেত্রে উৎপাদন করতে হলে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা যাদের আছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি আলোচনার পর অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। তাদের বিষয়গুলো ওষুধ প্রশাসন দেখছে। দেখে আমাদের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত হবে। এখনও তেমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
মন্ত্রী স্পষ্টভাষায় বলেন, যেকোনও ভ্যাকসিন ব্যবহার বা তৈরি করতে হলে আমাদের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন লাগে এবং সরকারেরও অনুমোদন লাগে। এর আগে রোববার করোনার টিকা উৎপাদনের অনুমতি এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়নি বলে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ আরও বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখার সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরন যাতে দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট খুবই অ্যাগ্রেসিভ। আমাদের দেশে কিছু পাওয়া গেছে। আমরা ট্রেস করেছি। খুব বেশি ছড়ায়নি। সীমান্ত বন্ধ রাখার মতো সঠিক উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। লকডাউনের মধ্যে ঈদযাত্রার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম নাড়ির টানে বাড়ি যাচ্ছেন, যান। কিন্তু, দেখবেন নাড়ি যেন ছিঁড়ে না যায়। অনেকে ফেরিতে গাদাগাদি করে বাড়ি গেছেন। আমরা সেটা চাইনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, এবারের ঈদে যারা গাদাগাদি করে বাড়ি গেছেন, তাদের বেশিরভাগ যুবক বয়সী। তার মন্তব্য, বেশি সংক্রমিত হলেও এদের মৃত্যুর হার কম। এ ছাড়া, ঈদের কেনাকাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দোকানপাটে অনেক ভিড় ছিল। অর্থনৈতিক কারণে এটা প্রয়োজন। তবে, এবার মাস্ক পরার হার আগের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
করোনায় ৩২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৬৯৮
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮১ জনে। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬৯৮ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৭ জনে।
সোমবার (১৭ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৪ জন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর মৃত্যুর খবর জানায় সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম ও মৃতের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৭তম স্থানে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করে সরকার।
গত মার্চে সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হলে ২৯ মার্চ বেশকিছু বিধিনিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বারের সংক্রমণের তীব্রতা খুব বেশি। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুর খবর আসে গত ১৯ এপ্রিল। সে সময় টানা চারদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশর ওপরে।
দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে ৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যু হয়। আর চলতি বছরের ১ মে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ