দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। একদিন পরই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন মুসল্লিরা। এবারের ঈদে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে ধুম্রজাল তৈরী হলেও এ খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ দাবি করেছেন তারা ৯৭ শতাংশ কারখানায় বেতন পরিশোধ করেছেন।
আজ বুধবার(১২ মে) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান বিজিএমইয়ের সভাপতি ফারুক হাসান। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, পরিচালক ভিদিয়া অমৃত খান প্রমুখ।
এসময় ফারুক হাসান জানান, তারা আশা করছেন (১২ মে) বুধবারের(আজ) মধ্যে শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস দেয়া সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৭ শতাংশ সদস্য কারখানা পোশাক শ্রমিকের বেতন এবং ৯৯ শতাংশ কারখানা বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তবে এবিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন শ্রমিকেরা। তাদের দাবি, অনেক কারখানা পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করেছে।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান জানান, ৬৮টি কারখানায় নিবিড় তদারকির মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়েছে। অবশ্য বর্তমানে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর দুটি সংগঠনের সদস্য বহির্ভূত মিলিয়ে রপ্তানিমুখী সচল পোশাক কারখানা প্রায় চার হাজার। আর আজ বিজিএমইএ যে তথ্য দিয়েছে সেটি কেবল সংগঠনটির সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৯১৩টি কারখানার।
বেতন বোনাসের বিস্তারিত তথ্যে সংগঠনটি জানায়, বর্তমানে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত মোট সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯শ’ ১৩টি। এরমধ্যে ১ হাজার ৮৬৬টি কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতন এবং ১ হাজার ৮৮২টি কারখানায় ঈদের বোনাস দেয়া হয়েছে।
বেতন আর উৎসব ভাতা নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন ৮শ’টি কারখানাকে গভীর নজরদারিতে রাখা হয়েছিল বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
অবশ্য বেতন বোনাস পরিশোধ সংক্রান্ত বিজিএমইএর তথ্যের সঙ্গে একমত নন পোশাক শ্রমিকরা। সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, বিজিএমইএর এ বক্তব্য সঠিক নয়। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক কারখানা পাওনা পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করেছে।
শ্রমিকনেতা বাবুল আখতার বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে বড় ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সমস্যা না হলেও ঠিকায় কাজ করা (সাব-কন্ট্রাকটিং) কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা অনিশ্চয়তায় আছেন। আবার বড় ও মাঝারি কারখানা মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ঈদ বোনাস দিলেও সাব-কন্ট্রাকটিং কারখানাগুলো দিচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকা। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার শক্ত তদারকির কারণেই প্রতি ঈদেই শেষ মুহূর্তে শ্রমিকের বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয় না।
শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৪ হাজার ৭৫৪টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা আছে। তার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪ হাজার ৪৭৩টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। তার মানে ২৮১টি বা ৭ শতাংশ কারখানা বেতন দেয়নি। আর ৪ হাজার ৭৫৪টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৪৩৬টি বোনাস দেয়নি।
শিল্প পুলিশের হিসাবে ঢাকা মহানগরের কারখানার তথ্য নেই। তবে আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৬৪৩ কারখানা তদারক করছে সংস্থাটি। তারা বলছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৮০টি কারখানা বেতন দেয়নি। ঈদ বোনাস দেয়নি ১২০ কারখানা।
একইভাবে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ৮১৬ কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৬১টি বেতন দেয়নি। ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি ৪৮ কারখানা। অন্যদিকে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য ৩১০টি কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৪টি বেতন দেয়নি। আর বোনাস পরিশোধ করেনি ২৮টি বস্ত্রকল।
শ্রমিকদের ছুটি নিয়ে বিজিএমইএর মন্তব্য
শ্রমিকদের ছুটি ইস্যুতে সৃষ্ট অসন্তোষকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ যাতে না ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য সরকারের নির্দেশনা মেনে আমরা তিন দিনের ছুটি দিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু কারখানায় অসন্তোষ হয়েছে।’
এ সময় শ্রম আইনে ছুটি সংক্রান্ত বিধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছুটি কম দেওয়া হয়নি। বরং সমন্বয় করা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে বেশি ছুটিও দেওয়া হয়েছে।’ আলোচনার মাধ্যমে ছুটি সংক্রান্ত বিরোধ এড়িয়ে চলতে অনুরোধ জানান তিনি।
সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চান বিজিএমইএ
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পোশাকখাতের বিদ্যমান সংকট তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘কারখানাগুলো বর্তমানে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করেছে। এখন ব্যয়ের চেয়েও কম মূল্যে ক্রয়াদেশ নিতে হচ্ছে।’ এ পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ২ বছর ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩ বছরে ৩০ কিস্তিতে শোধ করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করে বিজিএমইএ।
এসময়, আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পোশাক খাতের অনুকূলে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়।
রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য রফতানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎস কর দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে তা দশমিক দুই পাঁচ শতাংশ করা ও তা আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর রাখার দাবি জানানো হয়। এখাতের করপোরেট করহার সবুজ কারখানার জন্য ১০ শতাংশ ও অন্যান্য কারখানার জন্য ১২ শতাংশ আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বলবৎ রাখার অনুরোধ জানায় সংগঠনটি। এছাড়া, নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনার দাবি তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৬
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ