ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব পাঁচপাড়া (ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন) অবস্থিত মারকাজুল হিদায়াহ মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ফরিদ আহম্মেদ (৪০) কে ছেলে শিশু ধর্ষনের অভিযোগে আটক করছে ত্রিশাল থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে ওসি মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, হালুয়াঘাট উপজেলার ১২ বছরের এক শিশু মারকাজুল হিদায়া মাদ্রাসা থাকতো। লকডাউন চলাকালীন মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এসময়য় মাদ্রাসা পরিচালক মুফতি ফরিদ আহম্মেদ মাদ্রাসায় থাকতেন। মাদ্রাসা ছাত্র ওই শিশু গত ২১ এপ্রিল থেকে উক্ত মাদ্রাসায় থাকাকালীন সময়ে মুফতি ফরিদ আহম্মেদ প্রায় দিনই তাকে ধর্ষণ করতেন।
ঘটনার দিন গত ৮ মে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে মুফতি ফরিদ আহম্মেদ ভিকটিমকে ধর্ষণ করতে চাইলে বাধা দিলে হুজুর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনার পর আসামি কাউকে কিছু না বলার জন্য ভিকটিমকে ভয়ভীতি দেখায়।
পরে শিশুটি ঘর থেকে বের হয়ে ৯৯৯ এ কল দিলে ত্রিশাল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ আমিনুল হক সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদ্রাসা ছাত্রকে উদ্ধার করে ত্রিশাল থানায় নিয়ে আসেন। ভিকটিমের জবানবন্দি অনুযায়ী উপ-পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ আমিনুল হক এর নেতৃত্বে ত্রিশাল থানা পুলিশের একটি টিম উক্ত মাদ্রাসা থেকে মুফতি ফরিদ আহম্মেদকে আটক করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে ভিকটিম তাওহীদ এর মা আনজুমান আরা হালুয়াঘাট থেকে সংবাদ পেয়ে ত্রিশাল থানায় এসে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ত্রিশাল থানার মামলা নং ১১, তাং ০৯/০৫/২০২১, ধারাঃ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশা/০৩) এর ৯(১)। আসামি মুফতি ফরিদ আহমেদকে ময়মনসিংহ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হইলে আসামি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করে অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানা যায়।
আসকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, ছেলেশিশুদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে এখনও বলাৎকার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তবে তা ঘটনাটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে। অনেকেই মনে করেন, এটা তো বলাৎকার, ধর্ষণ না। গুরুতর কোনো অপরাধ না। আসলে ধর্ষণ তো ধর্ষণই, তা সে ছেলেশিশুর সঙ্গে হোক বা মেয়ে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। শীপা বলেন, আইনের মাধ্যমে সমস্যাটিকে শনাক্ত করে সমাধান খুঁজতে হবে। সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে প্রচলিত আইন পর্যালোচনা করে ছেলেশিশু ধর্ষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম) সোহেল রানা বলেন, বলাৎকার বা ছেলেশিশু ধর্ষণের ঘটনা বন্ধে আমরা ফেসবুক পেজগুলোর মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক নানা বার্তা দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে না পুলিশ। তবে এ সমস্যা রোধে ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদ্রাসাগুলোয় দিনের পর দিন ছেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চললেও তা বন্ধে এখনও তেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে বিপথগামী কিছু শিক্ষক ও মাদ্রাসাসংশ্নিষ্টরা এটাকে অপরাধ বলেই গণ্য করেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা দেন জড়িতরা। আবার ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে রেখে তা ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে শিশুদের জিম্মি করার ঘটনাও রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ