হরমুজ প্রণালীতে আবারও যুদ্ধের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও ইরানের ১৩টি নৌকা। মার্কিন জাহাজ ঘেরাও করায় ইরানি নৌবহরের দিকে ৩০ দফা গুলি ছোড়া হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে পেন্টাগন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, ইরানের রিভল্যুশনারি গার্ডের ১৩টি সশস্ত্র স্পিডবোড ছিল বহরে। মার্কিন দুটি জাহাজ, ফায়ারবোডের ৪৬০ ফুট দূরত্বে চলে এসেছিল সেগুলো। জাহাজগুলো মূলত মিসাইলবাহী সাবমেরিন ইউএসএস জর্জিয়ার পাহারায় নিয়োজিত ছিল।
তিনি বলেন, এ সময় সংকেত পাঠিয়ে তাদের কয়েকবার সতর্ক করা হলেও সেগুলো নিরাপদ সীমানা অতিক্রম করে। তখন তাদের হুঁশিয়ার করতে গুলি ছোড়া হয়। একমাসেরও কম সময়ে পারস্য উপসাগরে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হল দু’দেশের জাহাজ।
এর আগে গত মাসে পারস্য উপসাগরীয় জলসীমায় মার্কিন ও ইরানি যুদ্ধজাহাজ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। তখন যুক্তরাষ্টের কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজকে তিন ঘণ্টা ধরে নাজেহাল করেছে ইরানি জাহাজ।
এ বিষয়ে ইরান থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে বিবিসি জানিয়েছে।
হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেল রফতানি করা হয়। এ সমুদ্রপথটি ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে। হরমুজ প্রণালী মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে এ দেশগুলো এবং এর বাইরে তেল সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হরমুজ প্রণালীর একদিকে আছে আরব দেশগুলো। এসব দেশের মধ্যে আমেরিকার মিত্র দেশগুলো রয়েছে। হরমুজ প্রণালীর অন্য পাশে রয়েছে ইরান।
হরমুজ প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ যে অংশ সেখানে ইরান এবং ওমানের দূরত্ব মাত্র ২১ মাইল।
এই প্রণালীতে জাহাজ চলাচলের জন্য দুটো লেন রয়েছে এবং প্রতিটি লেন দুই মাইল প্রশস্ত।
হরমুজ প্রণালী সংকীর্ণ হতে পারে। কিন্তু জ্বালানী তেল বহনের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাহাজ চলাচল করার জন্য হরমুজ প্রণালী যথেষ্ট গভীর এবং চওড়া।
পৃথিবীতে যে পরিমাণ জ্বালানী তেল রপ্তানি হয়, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়। এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন এক কোটি ৯০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি হয়।
হরমুজ প্রণালী হচ্ছে ইরানের জ্বালানী তেল রপ্তানির প্রধান রুট। ইরানের অর্থনীতির জন্য এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের মোট রপ্তানি আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ আসে জ্বালানী তেল রপ্তানির মাধ্যমে।
ইরানের দাবি মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত জলপথ হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন উত্তেজনার সময় প্রণালীটি বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেয় ইরান।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার উদ্দেশ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে আলাপ-আলোচনা চলছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসেন। এর ফলে দেশদুটির মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানে সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে পুনরায় ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো আশা করছে, দুটি দেশই এই চুক্তিতে পুরোপুরি সম্মত হবে।
এরইমধ্যে হরমুজ প্রণালীতে এ কাণ্ড। এ ঘটনাকে অনিরাপদ ও অপেশাদার বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ