অক্সিজেনের অভাবে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি শহরের একটি সরকারি হাসপাতালে ১১ জন মারা গিয়েছে। আনন্দবাজার জানায়, অক্সিজেনের সরবরাহে সমস্যা হয়েছিল। তাই আইসিইউ-তে থাকা রোগীরা বেশ কিছুক্ষণ প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাননি। ওই সময়ের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ মাত্র ৪-৫ মিনিট অক্সিজেন ছিল না বলে দাবি করলেও মৃত রোগীদের স্বজনরা দাবি করেছেন, ‘হাসপাতালে অন্তত ২৫ মিনিট অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ ছিল। এদিকে জেলাশাসক এম হরিনারায়ণ জানিয়েছেন, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের তৎপরতায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। অক্সিজেনের চাপ কমে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফের অক্সিজেন চালুর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, ওই সময়ের মধ্যেই ১১ জন রোগী প্রাণ হারিয়েছেন।
হরি নারায়ন বলেন, ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক করা হয় আর এখন সবকিছু স্বাভাবিক আছে। আমরা অতিরিক্ত সিলিন্ডার মজুত করেছি আর ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। চিকিৎসা কর্মীরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গেছে।‘
তামিল নাড়ু থেকে অক্সিজেন পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ায় এই সংকট শুরু হয় বলে জানান হরি নারায়ন। তিনি জানান ওই হাসপাতালে প্রায় এক হাজার করোনা রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এর মধ্যে প্রায় সাতশ’ রোগীই আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। রোগীদের দেখভাল করতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় ৩০ জন ডাক্তার ছুটে যান।
১১ রোগীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি। এই ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ভারত জুড়ে অক্সিজেন সরবরাহ তদারকি করতে গত সপ্তাহে ১২ সদস্যের ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতে করোনা মহামারি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশটিতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট রয়েছে। অক্সিজেন–সংকটের কারণে দেশটিতে ইতিমধ্যে করোনায় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
একদিনে মৃত্যু ৩ হাজার ৮৭৬
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত। প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক মানুষ নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও রয়েছে চার হাজারের পাশাপাশি। দেশটিতে গত একদিনে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এদিন দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যান ৩ হাজার ৮৭৬ জন।
আজ মঙ্গলবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪২ জন। যা সোমবারের তুলনায় প্রায় ৩৭ হাজার কম। সর্বশেষ এই পরিসংখ্যান নিয়ে মহামারির শুরু থেকে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭ জনে।
গত শনিবার ও রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভারতে দৈনিক মৃত্যু ছাড়িয়েছিলো ৪ হাজারের গণ্ডি। তবে সোমবার সেই সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে এলেও মঙ্গলবার ফের বেড়েছে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩ হাজার ৮৭৬ জন। এতে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯২ জনে।
ভাইরাসে আক্রান্ত নতুন রোগী কমার সঙ্গে সঙ্গে ভারতে হ্রাস পেয়েছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে সক্রিয় রোগী কমেছে প্রায় ২৯ হাজার। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৫ হাজারের বেশি।
বিবিসি বলছে, বিশ্বে বর্তমানে করোনার সংক্রমণের কেন্দ্র ভারত। ভারতে সংক্রমণের ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ছাড়া ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও খেলাধুলার আয়োজনকে দায়ী করা হচ্ছে।
ভারতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে হিসাব সরকার দিচ্ছে, তার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, সংক্রমিত অনেকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে তাঁরা হিসাবের আওতায় আসছেন না। মৃত্যুর অনেক তথ্যও সরকারি হিসাবে যুক্ত হচ্ছে না।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা আগে জানালেও তাতে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতের করোনা সংকটের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কাঠগড়ায় তুলেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট। কোনোরকম রাখঢাক না রেখেই গত শনিবার এই জার্নালের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সরকারই দেশে কোভিড বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।
এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা।
করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। তবে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ টিকার সংকটের কথা জানাচ্ছে। তা ছাড়া টিকা গ্রহণের হারও কম।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪২৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ