ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের দফায় দফায় বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলের দিকে রকেট ছুড়ে মারলে পাল্টা জবাবে বিমান হামলা চালায় দেশটি। এদিকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা প্রশমনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের প্রতি এ আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যত দ্রুত সম্ভব উত্তেজনা প্রশমনের তাগিদ দিয়েছে।
বিমান হামলায় ২০ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী আরও মারমুখি হচ্ছে, অধিকার আদায়ে মাঠে নামলেও একবিন্দুও ছাড় দিচ্ছে না দখলদাররা। কোণঠাসা ফিলিস্তিনিদের হয়ে হামাসের রকেট হামলার জবাবের পর ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ২০ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
ফিলিস্তিনের জেরুজালেমসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই রাতভর চলে দফায় দফায় আক্রামণ। যে কোনো মূল্যে নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের হটিয়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। গুলি চালানোর পাশাপাশি স্টেন গ্রেনেড হামলা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের এমন নির্মম হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্র যথারীতি দুষছে ফিলিস্তিনিদের সংগঠন হামাসকে। সংগঠনটি যা করেছে তা গ্রহযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস।
আর ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন হামাসের সদস্য। গাজা থেকে দেড় শ রকেট ছোড়া হয়েছে। এগুলো ‘আয়রন ডোম এরিয়াল ডিফেন্স সিস্টেম’ ব্যবহার করে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গতকালের এই হামলার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই হামলা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাস সীমা অতিক্রম করেছে এবং ইসরায়েল তার শক্তি দিয়ে জবাব দেবে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের রাজধানী, আমাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল এবং আমাদের সেনাদের ওপর কোনো হামলা মেনে নেওয়া হবে না। যারা এই ধরনের হামলা চালিয়েছে, তাদের মূল্য দিতে হবে।’
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘর্ষের শুরু চলতি সপ্তাহের শুরুতে। আল-আকসায় পবিত্র জামাআতুল বিদা আদায়কে কেন্দ্র এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বলা হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সংঘর্ষের ঘটনা। এই সংঘর্ষের পর ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট আজ মঙ্গলবার বলেছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৭০০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই অতি দ্রুত রকেট হামলা বন্ধ করতে হবে । তিনি আরও বলেন, “দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে হবে”। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি একই রকম ভাবে বলেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংঘর্ষের ব্যাপারে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব টুইট করে বলছেন যে রকেট হামলা “অবশ্যই বন্ধ করতে হবে”। বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুসালেমে গুরুতর সংঘর্ষ হচ্ছে, যা তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গাজা থেকে ইসরায়েলের বেসামরিক লোকের উপর যে ভাবে হামলা করা হয়েছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।
সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক হলেও কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি। কিন্তু একজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাকে বলেছেন যে জাতিসংঘ, মিশর এবং কাতার। যারা ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন তারা সবাই চেষ্টা করছেন এই লড়াই থামাতে।
সহিংসতার পেছনের কারণ
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুসালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, পূর্ব জেরুসালেম হবে তাদের স্বাধীন দেশের রাজধানী।
ওই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে, কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুসালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার সম্ভাবনায় প্রতিদিনই কলহ তৈরি হচ্ছে।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে যেন যেকোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং ”বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়”। জোর করে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব লীগ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৪
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ