দেশে ৬ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বা ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ধরন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া চলতি মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের করোনোভাইরাস প্রতিরোধী ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা আসছে দেশে।
শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, গ্লোবাল ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে ছয়টি ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। চারটি কাছাকাছি মিল রয়েছে, আর দুটি নিশ্চিত পাওয়া গেছে। নমুনাগুলো দুটি আলাদা জায়গায় করা হয়েছে জানিয়ে সেব্রিনা বলেন, একটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যটি আইইডিসিআরে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরো বলেন, ‘এই মাসের শেষের দিকে ফাইজার থেকে ১ লাখ ৬২০ হাজার টিকা আসবে। সেই টিকা দিয়েই আমরা প্রথম ডোজ শুরু করব। এই টিকা থেকে অর্ধেক টিকা দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য রেখে দেয়া হবে। আমাদের টিকা কার্যক্রম এইভাবেই চলবে।’
টিকা নিতে গিয়ে কেউ কেন্দ্র থেকে ঘুরে এসেছেন এমনটা এখনও ঘটেনি জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো কেন্দ্রে টিকা নিতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন এমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়েনি। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে যে টিকা আছে, তাতে আমারা এখনও ১০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পারব।
সুতরাং কেন্দ্রে থেকে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন তৈরি হয়নি। দ্বিতীয়তো আমাদের দিক থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে যাদের প্রথম ডোজ সিরামের টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের দ্বিতীয় ডোজ সিরামের টিকা দেয়া যায়। যদিও কোন দিন টিকা পাব এমন তারিখ দিতে পারেনি সিরাম। দ্বিতীয় ডোজ আমরা সিরামের টিকা দিয়েই নিশ্চিত করব। আমাদের হাতে এক মাস সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিতে কাজ করছি। তবে আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সেব্রিনা জানান, টিকার চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে টিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত টিকা চলবে। ‘সংকটের কারণে আমরা প্রথম ডোজের টিকা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। সেই টিকা (যুক্তরাষ্ট্রের) আসার প্রথম ডোজ দেয়া হবে।’
কয়েকটা জেলায় টিকা দান বন্ধ রয়েছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জাবাবে সেব্রিনা বলেন, ‘কোনো জায়গায় টিকা দান বন্ধ নেই। গতকাল শুক্রবার গতকাল হয়তো বন্ধ ছিল।
করোনায় এক দিনে ৪৫ জনের মৃত্যু
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৮টা) আরও ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে । এ সময় নতুন করে ১ হাজার ২৮৫ জনের মধ্যে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন শুক্রবার দেশে ১ হাজার ৬৮২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আর মৃত্যু হয়েছিল ৩৭ জনের।
এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেলেন ১১ হাজার ৮৭৮ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭ লাখ ৭২ হাজার ১২৭ জন।
আজ শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো বুলেটিন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৯২ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬ হাজার ৮৩৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭০৩টি। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৮৫ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বুঝতে পারার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা অন্তত দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। পরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এই মহামারিকালে গত বছরের ডিসেম্বেরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাস দুয়েক পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল।
গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। মার্চ থেকে শুরু হয় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। মার্চের শেষ দিকে এসে দেশে নতুন রোগী বাড়তে শুরু করে লাফিয়ে। সঙ্গে বাড়তে থাকে মৃত্যু। সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। যদিও তা ছিল ঢিলেঢালা। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে আবারও সংক্রমণে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এখনো সে প্রবণতা অব্যাহত।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, করোনার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেওয়া লকডাউনের প্রভাবে সংক্রমণ নিম্নমুখী হয়েছে। তবে এখন লকডাউন শিথিল হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে যেকোনো সময় পরিস্থিতি আবার খারাপ আকার ধারণ করতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/এফএ/ ১৯৪০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ