
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এক থেকে দুই কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশের চলমান টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যে বিভিন্ন মহলের চাপে গণপরিবহন রাজধানী ও জেলার মধ্যে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
টিকা চেয়েছে সরকার
বৃহস্পতিবার (৬ মে) এক বৈঠকে আর্ল মিলারের সঙ্গে বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমাকে বলে গেলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে। আমি রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, ভ্যাকসিন আমাদের অগ্রাধিকার এবং যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে দেবে তখন যেন বাংলাদেশের কথা খেয়াল রাখে। এর জবাবে তিনি জানান, দিনক্ষণ বলতে পারবো না, তবে টিকার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
কত ডোজ টিকা চেয়েছেন বাংলাদেশ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবিলম্বে প্রয়োজন ৪০ লাখ। তবে আমি তাদের কাছে এক কোটি থেকে দুই কোটি টিকা চেয়েছি। তারা কতটা দেবে সেটি জানি না, তবে চাইতে তো অসুবিধা নেই। আমরা যে চিঠিটা দিয়েছি তাতে ৪০ লাখ চেয়েছি। এর কারণ হচ্ছে–যারা ইতোমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ নেবেন, সেই প্রক্রিয়াটি চলমান রাখার জন্য।’
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাঙালিদের উদ্যোগ নিতে বলেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রদূত সব সময় বৈঠক করছেন। এখানে মার্কিন দূতাবাস সিনসিয়ারলি কাজ করছে।’
রাশিয়া থেকে টিকা আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কবে টিকা আসবে, কতটুকু আসবে সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে থাকে।’ এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া একটি প্রস্তাব দিয়েছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে তারা ভ্যাকসিন দেবে বা যৌথ উৎপাদনে যাবে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখছে। আমাদের প্রস্তাব পাঠানোর পর আমরা দরকষাকষি করবো।’
ভারত থেকে টিকা আনার বিষয়ে মন্ত্রী জানান, ‘আমরা ভারতকে চিঠি দিয়েছি। আমি নিজে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, পুরোটা না দিতে পারলেও অবিলম্বে ৩০ লাখ ডোজ দেওয়ার জন্য। এর কোনও উত্তর পাইনি।’
চালু গণপরিবহন
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ কমাতে সরকারঘোষিত লকডাউনে রাজধানীতে টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে বাস চলাচল। মালিক সমিতি নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকায় বাস চলতে দেখা গিয়েছে।
এদিকে ‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় করণীয় এবং অক্সিজেন সংকট ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের মধ্যে বিভিন্ন মহলের চাপে গণপরিবহন রাজধানী ও জেলার মধ্যে চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউন বা বিধিনিষেধ ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বাড়ানোয় ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ভ্রমণের কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে মাসে সংক্রমণ বেড়েছে, সেই মাসে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছে।
বিয়ে-শাদি, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ওয়াজ মাহফিল ও হেফাজতের দৌড়াদৌড়ি দেখলাম, যে কারণে সংক্রমণ বেড়ে গেল। হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেড়ে গেল। অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে গেছে।
ভারতেও করোনা নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে তারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে করোনার মধ্যে নির্বাচন, হোলি খেলা, বিয়ে অনুষ্ঠান করেছে।’
তিনি বলেন, তারা সঠিক সময়ে টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি যে কারণে সংক্রমণ বেড়েছে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের চেয়ে সুস্থ দ্বিগুণ
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ৭৯৬ জনের। এ সময় নতুন করে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮২২ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৬০ জনে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা ভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৯৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২ হাজার ১৬৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় ২১ হাজার ৮২২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও পরীক্ষা করা হয়েছে ২১ হাজার ৫৮৫টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ