শ্রীমঙ্গল উপজেলার এনজিও হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি সংস্থা ‘আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠন’। দরিদ্র অসহায় ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর চা শ্রমিকদের স্বল্প সুদে ঋণ দে’য়ার কথা বলে গ্রাহক বানিয়েছিল সংগঠনটি।
এসব চা শ্রমিকদের উপার্জন সামান্য। প্রয়োজনে ঋণ লাগতে পারে— এমন চিন্তা থেকে সেই সামান্য আয়ের একটি অংশই তারা সঞ্চয় করেছিলেন এই এনজিওতে।
এরপর যখন ঋণ দেওয়ার সময় হলো, তখনই উধাও ‘আদিবাসী উন্নয়ন সংগঠনে’র প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা। মোবাইল ফোনও সবার বন্ধ। সঞ্চয় হারিয়ে সামান্য আয়ের প্রান্তিক এই চা শ্রমিকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সাত লাখ টাকা সঞ্চয় আদায় করা হয়
শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট, কালীঘাট, জাম্বুড়াছড়া, আমরাইল চা বাগান, হুগলিয়া ছড়া, হাতিমারা, ১৬ নম্বর বস্তি এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এই প্রতারক এনজিও।
এর মধ্যে গান্ধিছড়া এলাকার ৬৫ জন, আমরাইলছড়া চা বাগান এলাকার ২০ জন, জাম্বুড়াছড়া এলাকায় ৪২ জন, হুগলিয়াছড়া এলাকার ৪৫ জন, হাতিমারা এলাকার ৬৫ জন, রাজঘাট চা বাগান এলাকার ৭২ জন, ১৬ নম্বর বস্তি এলাকার ৪২ জন ছাড়াও আরও কিছু শ্রমিক গ্রাহক হয়েছিলেন প্রতারক এই এনজিওতে।
তাদের কাছ থেকে প্রায় সাত লাখ টাকা সঞ্চয় আদায় করে সংস্থাটি। সে হিসাবে একেকজন গ্রাহকের সঞ্চয়ের পরিমাণ টাকার অঙ্কে খুব বেশি না হলেও একশ টাকা মজুরি পাওয়া চা শ্রমিকদের কাছে এই সঞ্চয়ই পাহাড় সমান। আর এই সঞ্চয়ের বিপরীতে ঋণ নিতে গিয়েই তারা দেখতে পান, সংস্থার অফিস বন্ধ।
এ প্রসঙ্গে গান্ধিছড়ার হতদরিদ্র সন্তুষ চাষা বলেন, ‘আমার কাছে থেকে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয় নিয়েছে। কিন্তু ঋণ চাইতে গেলে নানা বাহানা দেখিয়েছে। এখন আমাকে ঋণ নেওয়ার জন্য আসতে বলেছে। এসে দেখি আমার মতো আরও অনেককেই আসতে বলেছিল। কিন্তু অফিসই তালাবদ্ধ।’
ঠকেছেন স্থানীয় মাঠকর্মীরাও
জানা গেছে, কথিত এই এনজিও’র কর্ণধার জেমস জেমারাক নামে এক ব্যক্তি। একবছর আগে শ্রীমঙ্গল শহরের বিরতি হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে ১২ জন মাঠকর্মী নিয়োগ করে কার্যক্রম শুরু করেন তিনি।
উপজেলার হতদরিদ্র চা শ্রমিকদের বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সদস্য করে। ঋণ দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় সঞ্চয়। চা শ্রমিকেরা তাদের সামান্য আয় থেকেও সঞ্চয় করেন এই সংস্থায়।
সূত্র মতে, কেবল গ্রাহকের টাকাই নয়, এই সংস্থায় কর্মরত স্থানীয় মাঠকর্মীদেরও ঋণ দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের সঞ্চয় আদায় করেন জেসম জেমারক। এরপর একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে অফিসে তালা ঝুলিয়ে সটকে পড়েন তিনি।
এতে এই সংস্থায় কর্মরত মাঠকর্মীরাও পড়েছেন বিপাকে। একদিকে চাকরি নেই, অন্যদিকে গ্রাহকদের চাপে এখন তারা পালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। জেমস জেমারাকসহ সংশ্লিষ্ট বাকিরা মোবাইল বন্ধ রাখায় তাদের সঙ্গে যোাগাযোগের কোনো উপায়ও পাচ্ছেন না সঞ্চয় হারানো শ্রমিকরা।
ঘটনা সম্পর্কে জানেন না ইউএনও
প্রান্তিক পর্যায়ের এই চা শ্রমিকেরা বলছেন, কেউ সহযোগিতা না করলে তাদের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না। কোনো আইনজীবীকে পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো অবস্থাও তাদের নেই। এ বিষয়ে সরকারি ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিঃশর্ত সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নজরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কোনো এনজিও আছে বলে আমার জানা নেই।
ঋণ দেওয়ার নাম করে সঞ্চয় হাতিয়ে নিয়েছে, এমন কোনো খবরও আমার কাছে আসেনি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোয়েব চৌধুরী বলেন, ‘এই সংগঠনের ঋণ দেওয়ার কোনো অনুমোদন নেই। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। শিগগিরই এর বিহিত আমরা করব। আমার পরামর্শ থাকবে, ভালো করে খোঁজখবর না নিয়ে কোনো সংস্থার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে যাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য কী করা যায়, আমরা দেখব। অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করা এই সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলব আমি। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করব।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০০৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ