![](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/04/oxford-vaccine_1-300x200.jpg)
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পুরোপুরি সক্ষম নয় বলে ইতোমধ্যে গবেষণায় দেখা গেছে। তাই অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের ভ্যাকসিন এমনভাবে প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে, যেন তা দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট থেকেও মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে।
গতকাল রোববার (১৮ এপ্রিল) অস্ট্রিয়ার সংবাদমাধ্যম কুরিয়ারে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যাস্ট্রাজেনেকার অস্ট্রিয়া কান্ট্রি ম্যানেজার সারাহ ওয়াল্টার্স জানান, পরিবর্তিত এ টিকা চলতি বছরের শেষ নাগাদ ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হবে। সাক্ষাৎকারটির বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার অস্ট্রিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সারা ওয়াল্টার্স এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরিবর্তিত সংস্করণের টিকা ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। বিজ্ঞাপন গবেষণা এখন পর্যন্ত যে ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা হলো দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত করোনার অধিক সংক্রামক ধারাটির বিরুদ্ধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিদ্যমান টিকা কম কার্যকর।
তবে এ প্রসঙ্গে সারা ওয়াল্টার্স বলেছেন, এ ব্যাপারে একটা চূড়ান্ত উপসংহারে যাওয়ার মতো যথেষ্টসংখ্যক গবেষণা এখন পর্যন্ত নেই। তবুও সম্ভাব্য প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ইতিমধ্যে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটির বিরুদ্ধে একটি পরিবর্তিত সংস্করণের টিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানান সারা ওয়াল্টার্স। তিনি বলেন, পরিবর্তিত সংস্করণের এই টিকা চলতি বছরের শেষ নাগাদ তৈরি হয়ে যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন দেশে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ ও চলমান তদন্তের বিষয়টি সরাসরি সারা ওয়াল্টার্সের সাক্ষাৎকারে তোলা হয়নি। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এই টিকার কার্যকারিতা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে চিকিৎসকদের দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার, যাতে চিকিৎসকেরা সাধারণ মানুষকে এ টিকার সুফল ও ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারে। যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) ও ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) বলেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সার্বিক সুফল যেকোনো সম্ভাব্য ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তারা যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে করোনার একটি টিকা উদ্ভাবন করেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্য প্রথম অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ টিকার প্রয়োগ চলছে।
যদিও দেহে রক্ত জমাট বাঁধার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার সন্দেহে কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবার কানাডায় এক সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
তবে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে দেহে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই বলে ইতোমধ্যে ডব্লিউএইচও, ব্রিটেন ও ইউরোপের স্বাস্থ্য রেগুলেটরসহ অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকেও জানানো হয়েছে।
করোনায় আজও ১১২ জনের মৃত্যু
এদিকে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙছে। আজও ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত কভিড-১৯-এ মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় এসব মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটির সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০ হাজার ৪৯৭ জনে। একই সময়ে আরো ৪ হাজার ২১৭ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৭ লাখ ২৩ হাজার ২২১ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
দেশে গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মাত্র ৩ মাসের মাথায় দৈনিক শনাক্ত ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ডিসেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। এমনকি একসময় দৈনিক শনাক্ত ৩০০-রও নিচে নেমে আসে। এরই মধ্যে দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলে কিছুটা স্বস্তি নামে। তবে এই স্বস্তি খুব বেশিদিন থাকেনি। দেশে সংক্রমণের যখন একবছর হতে চলেছে, ঠিক সেসময় নতুন করে বাড়তে শুরু করে সংক্রমণ। প্রায় প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের দিনের সংক্রমণের সংখ্যা। এরই মধ্যে গত সোমবার থেকে সাতদিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশ ৩৩তম এবং মৃতের সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ