ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তার নাম আহসানুল বান্না তামিম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের ‘বিজয়’ পক্ষের কর্মী।
গত ১২ এপ্রিল বন্ধ ক্যাম্পাস থেকে তাকে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যায় ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার(সিএফসি) ও সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা। ওদিনই তার বিরুদ্ধে সিএফসির এক কর্মী বাদি হয়ে মামলা করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। তবে আজ রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়।
১২ এপ্রিল চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া এক আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলার প্রাথমিক তদন্তে ওই ছাত্র ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন বলে সত্যতা পাওয়া গেছে। অতএব মামলা সুষ্টু তদন্তের স্বার্থে আসামীকে জেল হাজতের আটকে রাখার ব্যবস্থা করিতে সদয় মর্জি হয়।
তামিমের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সিএফসির কর্মী মোমিনুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। মামলার সাক্ষী সিএফসির আরেক কর্মী সাদাফ খান গণমাধ্যমকে বলেন, তামিম দীর্ঘদিন ধরে ফেসবুকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন উস্কানিমূলক লেখালেখি করে আসছিলেন। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধেও তার লেখা ছিল। গত ১২ এপ্রিল তাঁকে ক্যাম্পাসে জুনিয়ররা দেখতেপান। পরে জ্যেষ্ঠ নেতারা সহ তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মামলা হয়।
ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর দাবি, আহসানুল বান্না তামিম ছাত্রলীগের আরেক উপপক্ষ বিজয়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে বিজয়ের মাধ্যমে আলাওল হলে আসন পেয়েছিলেন। তবে তামিম বিজয়ের কেউ নন বলে জানান উপপক্ষটির নেতা সাবেক অর্থ সম্পাদক জাহেদুল আওয়াল। তিনি বলেন, এ নামে তিনি কাউকে চেনেন না। বিজয়ে এ নামের কেউ নেই।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যাল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তামিম বিজয়ের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে তিনি জেনেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্র সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী লেখালেখি করছেন ফেসবুকে। যার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। পাঁচ-সাতটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তামিমের।
তিনি বলেন, তামিম হেফাজত নেতা মামুনুল হককে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান বলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরোধিতা করেছিল। ধর্মীয় উস্কানিও দিয়েছিল। এরকম আরও ২২ টা পোস্ট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হকও একই কথা বলেন।
এদিকে, ফেসবুকে মন্তব্যের জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অমিত আচার্য্য (২৮) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সদর উপজেলার বটতলী থেকে তাকে প্রথমে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রশিদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই যুবকের মন্তব্য উসকানিমূলক। তাই তাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অমিত আচার্য্য খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অর্পণা চৌধুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা মিহির আচার্য্যের ছেলে। তিনি ফেসবুকে ‘ঋদ্ধ ঋষি’ নামের প্রোফাইল পরিচালনা করতো। শনিবার সন্ধ্যায় ওই প্রোফাইল থেকে একটি ধর্মীয় বক্তব্যের ভিডিওচিত্রের নিচে একটি মন্তব্য করা হওয়। পরে বিষয়টি স্থানীয়রা পুলিশকে জানালে আইনগত ব্যবস্থা নেয় তারা।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
“সবার মধ্যে একটা ভীতি যে এইটা বললে কী হবে! এবং আমরাও বলি যে এতকিছু বলো না তোমার বিপদ হবে। এটা স্বাধীন দেশে আমরা কেন করবো? এটা কিন্তু বেশ স্বার্থকভাবে সরকার করে ফেলেছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ একটা ভীতি প্রদর্শন, ভীতি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।”
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা আমাদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আইনটি নিয়ে বিতর্ক বা সমালোচনার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তির ওপর দেশে ও বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০০১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ